সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি ‘না’ ভোট ফিরছে?।নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে অংশীজনের মতামত
অবাধ, সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত নির্বাচন দিতে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে কমিশন ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে অংশীজনের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক প্রস্তাব কমিশনে জমা পড়েছে। কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের সকলের সারসংক্ষেপ একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে নিজেদের মধ্যে বসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।
সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন: ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। এতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উঠে এসেছে। তার মধ্যে একটি হলো রাষ্ট্রপতি পদে সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি চালু করা। শুধু তাই নয়, প্রেসিডেন্ট হতে হবে নির্দলীয়। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রার্থী হিসেবে কাউকে মনোনীত না করে ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচন করতে হবে।
‘না’ ভোট: বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্বাচনী সংস্কার কমিশন এমন একটি ব্যবস্থা দিতে চায় যাতে একদলীয় শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হয়। সে কারণে যেকোনো স্তরের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের সম্ভাবনা ঠেকাতে কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে অনেকেই ‘না’ ভোট পদ্ধতি চালুর পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। যাতে কোনো প্রার্থীকে যোগ্য মনে না করলে তাকে ‘না’ ভোট দিয়ে পরাজিত করে নতুন প্রার্থী নির্বাচন করার সুযোগ থাকে। কমিশনের কাছে এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন গঠনের নতুন পদ্ধতি: আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ছিল বিগত সরকারের ত্রুটিপূর্ণ আইন সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন পদ্ধতি চালু করা। এতে বলা হয়, জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে একটি কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রার্থীদের যোগ্যতা নির্ধারণ করবে। এরপর যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করলে তাদের মধ্য থেকে প্রার্থী বাছাই করে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হবে।
প্রবাসীদের ভোট কাজে লাগানো: জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৪ দশমিক ৮ মিলিয়নের বেশি বাঙালি রয়েছে। এসব প্রবাসীদের বেশির ভাগই জাতীয় নির্বাচনের সময় ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই এবার প্রবাসীদের ভোটকে কাজে লাগাতে চায় সংস্কার কমিশন। তাদের জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রবাসীরাও যাতে ইমেইল বা প্রযুক্তির সাহায্যে সরকার গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে সেজন্য একটি ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতন্ত্রের চর্চা: রাজনৈতিক দলগুলো যাতে কোনো পরিবার বা ব্যক্তির হাতে জিম্মি না হয় সেজন্য দলগুলোতে গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছেন অনেকে। দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে বা একই ব্যক্তি বারবার সভাপতি হতে না পারে এমন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
একক তফসিলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনা: স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ এবং সিটি কর্পোরেশন নিয়ে গঠিত। সংস্কার কমিশন এই ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং খরচ বাঁচাতে এই সংস্থাগুলিতে একক সময়সূচীতে ভোটের আয়োজন করার পরিকল্পনা করছে। এ জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মেয়র পদে ভোটের পরিবর্তে কাউন্সিলর পদে ভোট হবে। আর নির্বাচিতরাই তাদের প্রশাসনিক কাঠামো ঠিক করবেন। তাদের মধ্যে একজন মেয়র হবেন। প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই ব্যবস্থা চালু আছে। আরেকটি তফসিল খরচ বাঁচবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ।
উপজেলায় নারী ভাইস চেয়ারম্যান’ পদ বিলুপ্ত : উপজেলায় নারী ভাইস চেয়ারম্যান থাকবে না এমন প্রস্তাব পেয়েছে কমিশন। প্রতিটি উপজেলায় ওয়ার্ড থাকবে। একটি উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন হলে ৩০টি আসন থাকবে। ৩০ জন নির্বাচিত হয়ে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্ধারণ করবেন। জেলা পরিষদেও আরও ওয়ার্ড থাকবে। তাহলে প্রার্থী হওয়ার ও নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বাড়বে। তবে আদিবাসীদের জন্য তা কতটা বাড়বে সেটাই দেখার বিষয়। না বাড়লে তাদের স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সংরক্ষিত নয়, নারীদের সরাসরি নির্বাচন: নির্বাচনী সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নারীরা সরাসরি নির্বাচন চেয়েছেন। অনেকেই একটি ঘূর্ণন ব্যবস্থা চেয়েছেন। নারীবান্ধব নির্বাচন করতে হবে। ইসির কর্মকর্তাদের এক-তৃতীয়াংশ নারী হতে হবে।