সৌরভ নয় লুটপাট আর দুর্নীতির দুর্গন্ধ ছড়াতেন গোলাপ
মাদারীপুর-৩ (মাদারীপুর-কালকিনি ডাসার ও মাদারীপুর সদরের কিছু অংশ) সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপ। ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় একছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে গডফাদার হয়েছেন। এলাকার যাবতীয় কর্মকাণ্ড তার নির্দেশেই চলত। তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ, মনোনয়ন-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, সরকারি চাকরিতে লোক নিয়োগ, বদলি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোলাপের বেশ কিছু ফ্ল্যাট, জমি ও ব্যবসা রয়েছে। শুধু দেশেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে ৯টি বাড়ি কিনেছেন তিনি। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় একশ কোটি টাকা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে শত শত কোটি টাকা। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম যুক্ত করার অভিযোগ এনেছে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আব্দুস সোবহান গোলাপের বাবা ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক। এলাকায় তেমন জমি ছিল না। জীবিকার সন্ধানে তিনি আশির দশকে আমেরিকায় পাড়ি জমান। সেখানে চালকের চাকরি নেন। তারপর পিজ্জা বিক্রি শুরু করেন। একপর্যায়ে শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে দেখা হয় গোলাপের। পরিচয় থেকে গভীর সম্পর্ক পর্যন্ত। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। জে’র পরামর্শে তিনি দেশে আসেন। ২০০৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সচিব এবং ২০১৪ সালে বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পান। ২০১৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ক্ষমতার অপব্যবহার করে গোলাপের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমপি হওয়ার আগ পর্যন্ত তার প্রতিবেশীরাও জানতেন না তিনি মুক্তিযোদ্ধা। মাদারীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার হারুন শরীফ বলেন, আবদুস সোবহান গোলাপ একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। আমরা তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিনতাম না। তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলেও শুনিনি। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর শুনেছি আবদুস সোবহান গোলাপ মুক্তিযোদ্ধা।
স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকায় গোলাপ পরিবারের জমি কিছুই নেই। এমপি হওয়ার পর দখল করে অনেক জমির মালিক হয়েছেন। আত্মীয়স্বজনের জমিও দখল করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে মামলা দিয়ে হামলা চালিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। দখলকৃত জমি ফিরে পেতে গোলাপের বিরুদ্ধে মাদারীপুর আদালতে ৫ জন মামলা করলেও কোনো প্রতিকার পাননি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবিএম সালাহ উদ্দিন, জুলহাস বেপারী, শাহীন সুলতানা, মাসুম বেপারী, মঞ্জুয়ারা বেগম, মুজিবুর রহমান, শাহনাজ বেগম, মশিউর রহমান, মো: কামরুজ্জামানসহ ১০ জন গোলাপের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
এবিএম সালাহ উদ্দিন বলেন, ক্ষমতা দেখিয়ে আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি গোলাপ দখল করে নিয়েছে। আদালতে মামলা করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। আশা করছি এখন ন্যায়বিচার পাবো।’
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা এবিএম নুরুল আলমের পৈতৃক জমিও দখল করে রেখেছে গোলাপ। নুরুল আলম বলেন, তিনি আদালতে মামলা করেছেন।
এদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা চুরির অভিযোগ উঠেছে গোলাপের বিরুদ্ধে। দলীয় প্রতীক পেতে প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিতেন গোলাপ। তিনি একজনকে মনোনীত করেছেন এবং বাকি টাকা ফেরত দেননি। সিরাজ নামের এক ব্যক্তি জানান, মনোনয়ন দেওয়ার জন্য গোলাপ তার কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি মনোনয়ন না পেয়ে টাকাও ফেরত দেননি। এ ছাড়া জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন কমিটিতে দলীয় পদ দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন গোলাপ। কালকিনির সাহেবরামপুর এলাকার মুরাদ সরদার নামে এক বাসিন্দা জানান, গোলাপ তাকে পদ দেওয়ার জন্য তার কাছ থেকে অনেক টাকা নেন। কিন্তু তাকে ওই পদ দেওয়া হয়নি।