নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন।ক্ষণে ক্ষণে পাল্টে যাচ্ছে ভোটের সমীকরণ
১৬ জানুয়ারি, রবিবার। সেই ভোটের সকালের অপেক্ষায় নার্ভাসনেস বাড়ছে! চারদিকে নখ কামড়ানোর উত্তেজনা। পেন্ডুলাম দুলছে, প্রচারের মাঠে বাতাস বইছে। ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে নির্বাচনের রঙ, ভোটের সমীকরণ। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ভোটকেন্দ্রও প্রস্তুত রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ভোটের ক্যানভাসে নৌকা আঁকছেন সেলিনা হায়াত আইভী, আর তৈমুর আলম খন্দকারের বাজি হাতিতে। তাদের দুজনের পেছনে আরেক কুশীলব। তিনি শামীম ওসমান নামে পরিচিত। স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি)। হয়তো সে কারণেই নারায়ণগঞ্জ সিটির ভোট নিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। আগামী ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে ভোটের মঞ্চে চোখ রাখতে বাধ্য হবে সারাদেশের মানুষ। এর মূল ‘কারিগর’ও তিনি। শামীম ওসমানও সাধারণ ভোটের বিপরীতে উচ্ছ্বাসের জোগান দিচ্ছেন।
সর্বশেষ খবর হলো, ভোটকেন্দ্রের হাওয়া আইভীর দিকে বইছে, তৈমুর আবার কাঁপছে। ভোটের যোগ-বিয়োগ এই মুহূর্তে পরিবর্তন হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভী দলীয় নেতা-কর্মীদের সমর্থন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে শনিবার নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। তবে চিঠিতে বলা হয়েছে, মেয়াদ শেষ হওয়ায় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। একই কারণে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি ভেঙে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
এমন পরিস্থিতিতে দলের কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির নেতারা প্রকাশ্যে তৈমুরকে সমর্থন জানিয়েছেন। গত শুক্রবার তৈমুরের প্রচারণায় তার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পার্টির চার ইউপি চেয়ারম্যান। শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভী। তিনি বলেন, তৈমুর বিএনপি বা স্বতন্ত্র প্রার্থী নয়। তিনি শামীম ও সেলিম ওসমানের প্রার্থী।
তৈমুর আলম শামীম ওসমান-আইভীর প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমি জনগণের প্রার্থী। যেহেতু তিনি জনগণের প্রার্থী, সেহেতু আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজের পরাজয় আন্দাজ করতে পারায় আজেবাজে কথা বলছেন।
আমি শামীম ওসমানের নই, নিজের পায়ে হাঁটছি।
আইভীর বক্তব্যের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শামীম ওসমান বলেন, “আমার নীরবতা নিয়ে যে ধরনের কথাবার্তা চলছে, এখনই নীরবতা ভাঙার সময়। আমি সত্য বলতে চাই। সাধারণ মানুষকে জানানোর জন্য এটাই হবে সত্য। সংবাদ সম্মেলনে সত্য প্রকাশ করবেন, তাই এই প্রতিবেদককে অপেক্ষা করতে বলেছেন তিনি।
এদিকে, কয়েকদিন আগে নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে আইভী শামীম ওসমানকে ‘বড় ভাই’ বলে সম্বোধন করে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে তিনি প্রচারণায় আসতে পারেননি। তবে তিনি নৌকার পক্ষে। নৌকার বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু হঠাৎ করেই অতীতের মতো শনিবারও নিজ দলের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে ‘গডফাদার’ আখ্যা দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা বলেন, ভোটের আগে আইভীর এমন কথা বলা উচিত হয়নি। তাছাড়া আইভীপন্থীরা বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। শনিবার মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হলে আইভী সমর্থকদের মধ্যে উল্লাস বিরাজ করছে। আইভিপন্থী নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আরও অনেক কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে।
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর থেকে বিএনপি নেতা তৈমুরকে ধীরে ধীরে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও পরে দলীয় চেয়ারপারসনের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতি থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দলে একের পর এক পদ থেকে তৈমুরকে প্রত্যাহার করা হলে তার পাশে দাঁড়ান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য এসএম আকরাম। এসএস আকরামের পাশাপাশি জেলা জাতীয় পার্টি ও জেলা যুব সংহতির নেতৃবৃন্দ তৈমুরকে সমর্থনে গত শুক্রবার গণসমাবেশে অংশ নেন।
শুক্রবার জেলা জাতীয় পার্টির তিন যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, মাকসুদ হোসেন ও এহসান উদ্দিন চৌধুরী এবং জেলা যুব সংহতির সদস্য সচিব কামাল হোসেন তৈমুরের সমর্থনে তার গণসমাবেশে অংশ নেন। তারা সবাই বন্দরের বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মেয়র পদে কোনো প্রার্থী না দিলেও আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন করেনি। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান এ বিষয়ে নীরব। তার ছোট ভাই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানও নীরব। এই দুই সংসদ সদস্য সিটি নির্বাচনে কোনো ভূমিকা রাখেননি।
বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আইভীকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, তিনিও আমাকে চেনেন। তিনি মেয়র থাকাকালে উপমন্ত্রী ছিলেন।