যানবাহনের ঘাটতিতে পুলিশের মাঠের কার্যক্রম ব্যাহত
পুলিশের গাড়ির সংকট দীর্ঘদিনের। জুলাই ও আগস্টে গণবিক্ষোভের সময় বিপুল সংখ্যক পুলিশের গাড়ি ভাংচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এতে সংকট আরও প্রকট হয়ে ওঠে। ফলে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর যানবাহন সংকটের কারণে পুলিশের টহলসহ নিয়মিত কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এমনকী, অপরাধের খবর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারছে না। যানবাহন সংকটের কারণে পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের কাজও ব্যাহত হচ্ছে। জোরপূর্বক যানবাহন না থাকায় মোটরসাইকেলের টহলের দায়িত্ব বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, থানাকে অগ্রাধিকার দিয়ে গাড়ি দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে পুলিশের গাড়ির ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতরের সূত্র জানায়, সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের ১৬,১২৪টি পুলিশের গাড়ি TO&E (সাংগঠনিক কাঠামো) এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বর্তমানে গাড়ি রয়েছে ১০ হাজার ৯৪৬টি। ফলে গাড়ির ঘাটতি রয়েছে ৫ হাজার ১৭৮টি। এর মধ্যে ৫৭টি থানায় কোনো যানবাহন নেই। বিশুদ্ধ পানি পরিবহনের জন্য ৪৮২টি পুলিশের গাড়ির প্রয়োজন। বর্তমানে সেখানে ৩০২টি। অর্থাৎ ১৮০টি নৌ পরিবহনের গাড়ির ঘাটতি রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ১ হাজার ১৪৬টি গাড়ি ভাংচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে ২৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, আমাদের গাড়ির সংকট রয়েছে। কিন্তু আমরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও সেবা প্রদান থেকে দূরে থাকতে পারি না। তাই আমরা ঘাটতি পূরণে কাজ করছি। আমরা গুরুত্ব অনুযায়ী বিভিন্ন ইউনিটে গাড়ি সরবরাহ করছি। সংকট নিরসনে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ওইসব স্থানে যানবাহন দেওয়া হয়েছে। যে কোন ঘটনার রিপোর্টে থানা পুলিশই প্রথম এগোয়। তাই থানাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য সমস্যার মতো যানবাহনের সমস্যাও ধীরে ধীরে সমাধান করা হবে।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীসহ কয়েকটি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ হয়। যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষে কয়েকজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা চালায়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে থানাসহ তিনটি ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ থানার ৭টি গাড়ি, ওই সময়ের একটি এসি ও এডিসিসহ মোট ৯টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওই দিন বাইরে থেকে আসা পুলিশ সদস্যদের গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে থানার ভেতরে থাকা পুলিশের মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা গাড়িও। থানার পূর্ব পাশে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ভবনের সামনে দাঁড়ানো পুলিশের অন্তত ৩৫টি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়।
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি ফারুক আহমেদ বলেন, তার থানায় মোট গাড়ি রয়েছে পাঁচটি। থানায় ১০টি গাড়ি দরকার। থানায় ৭৪ জন এসআই ছিলেন। এখন ২২ জন আছে। জনবল ও যানবাহনের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে। আমাদের সীমিত জনবল দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
রাজধানীর ওয়ারী বিভাগের একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেসব থানায় সাত-আটটি গাড়ি ছিল, সেখানে দুই-তিনটি গাড়ি রয়েছে। তাহলে আমাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। গাড়ির পেট্রোল শুল্ক এখন সম্ভব নয়। তবে আমরা এই ঘাটতি দূর করার চেষ্টা করছি। তাই মোটরসাইকেল নিয়ে দল বেঁধেছি। মোটরসাইকেলে পেট্রোলের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দেশের অন্যান্য থানার যানবাহনসহ লজিস্টিক সাপোর্টের চিত্র প্রায় একই। থানায় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা খুবই সীমিত। ৫ আগস্ট পরিবর্তনের আগে পুলিশ লেগুনা, মাইক্রোবাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা অন্যান্য যানবাহন রিকুইজিশন করত। কিন্তু এখন আর পুলিশ রিকুইজিশন করে না। অনেক সময় পুলিশকে নিজ খরচে ভাড়া গাড়ি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়।