আওয়ামী সুবিধাভোগী মামুনের দাপটে কাবু রাজউক

0

মোঃ রকিবুল আল মামুন ওরফে আর এ মামুন। তিনি একাধিক প্রতিষ্ঠানের এমডি ও চেয়ারম্যান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো নামে মাত্র। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি নিজেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি বলতেন প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর বন্ধু। কখনো গিয়াস উদ্দিনের ছোট ভাই আল মামুন। এসব পরিচয় দিয়ে তিনি বিভিন্ন অফিস-আদালতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। শুধু তাই নয়। রানা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে আর এ মামুন একবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই সভার ছবি ব্যবহার করে তিনি সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থাকে প্রভাবিত করতে থাকেন।

অবৈধ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকেও কোটি টাকার ব্যবসা চুরি করেছেন। এসব ঘটনায় আঃ মামুনের বিরুদ্ধে অতীতে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে বহু অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই তিনি অধরা থাকতে পেরেছেন। বর্তমানে আর এ মামুন ভল আবার নিজেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ছোট ভাই হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং বরাবরের মতো প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তারাও তার সহিংসতায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।

জানা গেছে, মামুনের পেশাই মূলত প্রতারণা। যখন সরকার ক্ষমতায় থাকে, তখন সরকারের কাছের লোকদের ছদ্মবেশী করে অর্থ আত্মসাৎ করাই এর ব্যবসা। তার প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন এখনও প্রতিকারের আশায় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, গুলশান-১ নম্বর রোডের ন্যাম ভিলা প্রজেক্টের ২-ডি-১ ফ্ল্যাট বরাদ্দে ভয়ানক জালিয়াতি করেছেন আরএ মামুন। রাজউকের রেকর্ড বলছে, ফ্ল্যাটের বরাদ্দদাতা মাহমুদ মামুন। ২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর রাজউকের টেকওভার লেটারে মাহমুদ মামুনের নাম উল্লেখ থাকলেও তা হঠাৎ করে এ মামুনের নাম হয়ে যায়। সেখানে ন্যাম ভিলা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির বাসিন্দারা রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দায়িত্বের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাদের অভিযোগ, আ মামুন পরিচয় গোপন করে মাহমুদ মামুনের নামে বরাদ্দ নেন এবং জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নামে ফ্ল্যাটের দলিল নেন। ৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৯ তারিখে, নাম ভিলা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি একটি সংবাদ সম্মেলন করে, অভিযোগ করে যে সরকারী সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করা হয়েছে। মামুনের অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখলের অভিযোগও রয়েছে।

এদিকে জালিয়াতির মাধ্যমে ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়ে আরেকটি কেলেঙ্কারি করেন মামুন। রাজউকের ফ্ল্যাট বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী, ফ্ল্যাটের নির্ধারিত মূল্য চার কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু তিনি ৩টি কিস্তি পরিশোধ করলেও চতুর্থ কিস্তি পরিশোধ করেননি। কিন্তু ফ্ল্যাট দখলে আছে।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে একদিন রাজউকের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ছিদ্দিকুর রহমান টেলিফোনে মামুনের আবেদনের বিষয়টি বিবেচনার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন। এরপর চেয়ারম্যান রাজউকের সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী রাজউকের এস্টেট ও ল্যান্ড-১ শাখা থেকে রাজউকের আইন শাখায় আইনি মতামত পাঠানো হয়েছে। আইন শাখার দেওয়া মতামত অনুযায়ী এস্টেট ল্যান্ড-১ শাখা ব্যবস্থা নেবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের একজন কর্মকর্তা জানান, আইনগতভাবে তাকে (মামুন) আর কোনো সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। তবে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ থাকায় আমরা কিছু বলতে পারছি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের পরিচালক (এস্টেট অ্যান্ড ল্যান্ড-১) মো: কামরুল ইসলাম বলেন, আইনত বাকি কিস্তি পরিশোধের কোনো সুযোগ নেই। তবে সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। বোর্ড বিবেচনা করলে তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু এমন নজির নেই। এখন বরাদ্দ বাতিল হলে নতুন করে বরাদ্দের জন্য আবেদন চাওয়া হবে। এটাই নিয়ম।

এ বিষয়ে জানতে রকিবুল আল মামুনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে, অভিযোগের বিশদ বিবরণ লিখে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *