নারায়ণগঞ্জ থেকে উধাও ওসমান পরিবার,শাহজাহান আকন্দ শুভ, ঢাকা
এম ওসমান আলী তার জনহিতকর কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে ‘খান সাহেব’ উপাধি লাভ করেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের দমননীতির প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯৫২ সালে আমাদের মাতৃভাষা আন্দোলনেও তিনি প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ওসমান আলী সম্পাদিত পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, কবি জসীমউদ্দীন প্রমুখ নিয়মিত লিখতেন। ওসমান আলীর ছেলে একেএম সামসুজ্জোহাও ছিলেন নারায়ণগঞ্জের একজন সুপরিচিত সমাজপতি। এই দুই পূর্বপুরুষের হাত ধরেই নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের মর্যাদা ও প্রভাব ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে এবং মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করে। কিন্তু সামসুজ্জোহার পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ তার ছেলে নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানের সময় ওসমান পরিবার নানা সমালোচনার মুখে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সামাজিক প্রতিপত্তি ও রাজনৈতিক প্রভাবকে কেন্দ্র করে হত্যা-ভাংচুর, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, বিরোধী মতাদর্শীদের নির্যাতন ও দমনসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে ওঠে যে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবার নিখোঁজ হয়। শুধু তাই নয়। এই পরিবারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চলেছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শামীম ওসমানকে শেষবার দুবাইয়ে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেলিম ওসমান ও প্রয়াত নাসিম ওসমানের পরিবারকে আর নারায়ণগঞ্জে দেখা যায়নি।
নারায়ণগঞ্জে স্কুল ছাত্রী টুকি হত্যা, চাঞ্চল্যকর সাত খুনসহ একাধিক খুনের অভিযোগে বারবার অভিযোগের আঙুল উঠছে ওসমান পরিবারের দিকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই পরিবারের সদস্যরা রয়ে গেছেন আইনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে হাসিনা সরকারের পতনের পর শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ তাদের অনুসারীরা এখন একের পর এক মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন।
সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সরকার পতনের কয়েকদিন পর তাকে দিল্লির একটি মাজারে দেখা গেছে বলেও সংবাদমাধ্যমে খবর আসে। সাবেক সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান ও সেলিম ওসমানের পরিবার কোথায় পালিয়েছে তার কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া মৃত নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানকে খুঁজছে র্যাব। সে নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র হত্যা মামলার প্রধান আসামি। কিন্তু হাসিনা সরকারের পতনের কয়েকদিন আগে থেকেই ওসমান পরিবারের কথায় নারায়ণগঞ্জ শহর চলছিল। আজমেরী ওসমানও তখন প্রকাশ্যে ছিলেন। কিন্তু সরকারের পতনের পর এসব দৃশ্যও অদৃশ্য হয়ে যায়।
এদিকে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবরে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়ি ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনতা ৫ আগস্ট বিকেলে তোলারাম কলেজ রোড এলাকায় নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার টর্চার সেল নামে পরিচিত অফিস ভাঙচুর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজমেরীর বাড়িতে হামলার সময় কোটি টাকা মূল্যের ৩টি গাড়ি ভাঙচুর, যন্ত্রাংশ ও বহু মূল্যবান আসবাবপত্র লুট করা হয়। এ সময় ওই বাড়ি থেকে অনেককে বিদেশি কুকুর, মদ ও বিয়ার নিতে দেখা যায়। পরে বঙ্গবন্ধু সড়কের নাসিম ওসমান প্লাজাও ভাঙচুর করা হয়। চাষাঢ়ায় সেলিম ওসমানের বাড়ি, জামতলায় শামীম ওসমানের বাড়ি, চাষাঢ়ায় হীরা মহল ও বায়তুল আমান ভবনও ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। নারায়ণগঞ্জের জামতলা এমপি গলি এলাকায় একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির মালিক শামীম ওসমানের। সরকারের পতনের দিন বিকেলে ওই বাড়িতেও হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।