পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন

0

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ থাকলেও তৃতীয় ইউনিট যা প্রতিদিন ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা চালু ছিল। ১ মাস ৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত শুক্রবার বিকেল ৫টা ১৭ মিনিটে উৎপাদন শুরু হয়। দুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়।

জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন অব্যাহত রেখেছিল চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল।

তাদের পাঁচ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর। চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদন চালু রাখতে ছোটখাটো মেরামত ও খুচরা যন্ত্রাংশ দেওয়ার কথা থাকলেও চীনা ঠিকাদার কিছুই সরবরাহ করেনি। যার কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বারবার ত্রুটিপূর্ণ হয়েও সঠিকভাবে মেরামত করা যাচ্ছে না। এ কারণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে প্রতিটি ইউনিটে দুটি ইলেক্ট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্পের প্রয়োজন। যা ওই ইউনিটে জ্বালানি হিসেবে তেল সরবরাহ করে উৎপাদন চালিয়ে যায়; কিন্তু ২০২২ সাল থেকে, তৃতীয় ইউনিটের দুটি পাম্পের মধ্যে একটি ব্যর্থ হওয়ায়, এটির উত্পাদন বিকল্প হিসাবে একটি ইলেক্ট্রো-হাইড্রোলিক তেল পাম্প দিয়ে চলছিল, যে কোনও সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। ফলে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাঝে মাঝে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি একাধিকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নজরে আনা হলেও তারা তা আমলে নেয়নি।

সর্বশেষ মেরামতের জন্য গত ৬ সেপ্টেম্বর ইউনিটটি চালু হওয়ার দুদিন পর আজ সন্ধ্যায় আবার যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কোল ইয়ার্ডে ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুদ রয়েছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে দৈনিক প্রায় ৩ থেকে ৩৫০০ মেট্রিক টন কয়লা সরবরাহ হয়। তিনটি ইউনিট চালু রাখতে স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়। যাইহোক, তিনটি ইউনিট একসাথে পরিচালিত হয়নি। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দ্বারা সরবরাহকৃত কয়লার উপর নির্ভরশীল।

বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রতিটি ইউনিটের জন্য দুটি ইলেক্ট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প রয়েছে। যা ওই ইউনিটে জ্বালানি হিসেবে তেল সরবরাহ করে উৎপাদন চালিয়ে যায়; কিন্তু ২০২২ সাল থেকে, তৃতীয় ইউনিটের দুটি পাম্পের একটি ব্যর্থ হয়েছে। এরপর থেকে ঝুঁকি নিয়ে একক পাম্প দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু সোমবার একটি পাম্প ব্যর্থ হলেও দিনভর চেষ্টা করেও চালু করা যায়নি। ফলে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছে। মেশিনটি চীন থেকে এলে উৎপাদন শুরু হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *