আপিল বিভাগে সাতটি পদ শূন্য বিচারপতির। মামলাজটের শন্কা, বেঞ্চ এখন একটি

0

দেশের সর্বোচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তিন-চতুর্থাংশ শূন্যপদ রয়েছে। ১১টি পদের মধ্যে বর্তমানে সাতটি শূন্য রয়েছে। জ্যেষ্ঠতার কারণে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে বঞ্চিত বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী দীর্ঘ ছুটিতে চলে যাওয়ায় এখন আপিল বিভাগে তিন বিচারপতি রয়েছেন। ফলে আপিল বিভাগের বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি এবং বিচারক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বেঞ্চের মেয়াদ বাড়ানো বাধাগ্রস্ত হবে। জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগের প্রয়োজন আছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি একজন বিচারক নিয়োগ করেছেন। তাকে বিষয়টি জানানো হবে। আশা করি রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবেন। এদিকে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ রোববার থেকে নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করবে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল বিভাগে কর্মরত বিচারপতির সংখ্যা ছিল পাঁচজন। এরপর হাইকোর্টে নিয়মিত ছুটি শুরু হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যান। একই দিনে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে সাংবিধানিক ক্ষমতা দিয়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। দীর্ঘদিন ধরে আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চে মামলা নিষ্পত্তি হতো। একটি বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং দ্বিতীয় বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। এখন আপিল বিভাগে বেঞ্চের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে একটিতে। এর প্রধান কারণ বিচারক স্বল্পতা। সুপ্রিম কোর্টের প্রথা অনুযায়ী, হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চের মামলা আপিল বিভাগের আরও বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দ্বারা নিষ্পত্তি করা হয়। এ পর্যায়ে আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চের কোনো সদস্য অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে ছুটিতে থাকা বিচারপতি ইমান আলী চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান। আপিল বিভাগে বিচারক সংকট প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আপিল বিভাগের সংকটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই অবগত। প্রধান বিচারপতি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছেন। আশা করছি, সংশ্লিষ্টরা দ্রুত বিচারক নিয়োগের ব্যবস্থা নেবেন। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা ১১ নির্ধারণ করেছেন। সরকার কেন নিয়োগ বিলম্ব করেছে তা স্পষ্ট নয়। আপিল বিভাগে হাজার হাজার মামলা ঝুলে আছে। আপিল বিভাগে দুটি নয়, তিনটি বেঞ্চ থাকতে হবে। তাহলে ভোগান্তি কমে যেত এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিষ্পত্তি করা সম্ভব হতো। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও বিচারাধীন মামলার বিচার ত্বরান্বিত করতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা বাড়িয়ে ১১ জন করে। সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা উল্লেখ নেই। সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির পরামর্শ ও চাহিদা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন সময়ে বিচারক নিয়োগ করেন। বিচারক নিয়োগের বিষয়ে সংবিধানের ৯৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ ও নিয়োগ করেন। অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “প্রধান বিচারপতি (যাকে ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ বলা হবে)) এবং প্রতিটি বিভাগে আসন নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রয়োজন হতে পারে এমন অন্যান্য বিচারকের সংখ্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হবে।” সংবিধান অনুযায়ী একজন বিচারপতি ছয় বছর বয়স পর্যন্ত পদে থাকতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *