সাবেক শতাধিক মন্ত্রী-এমপি প্রভাবশালী দুদকের নিশানায়
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ছিল দন্তহীন বাঘ। ক্ষমতার পালাবদলের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে দুর্নীতিবিরোধী এই সংগঠনটি। বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অংকের সম্পদ ও সম্পদের মালিক হওয়া ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ঘনিষ্ঠ সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীদের শত শত অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের দুর্নীতি। ধাপে ধাপে হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালীদের টার্গেট করা শুরু করেছে কমিশন। ইতিমধ্যেই বিদায়ী সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করেছেন। নতুন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (জাবেদ), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা পুলিশ) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। ইতিমধ্যে হারুন অর রশিদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। যাতে তারা দুর্নীতির টাকা তুলতে না পারে।
গতকাল দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিশনে তাদের অভিযোগ নিয়ে প্রক্রিয়াগত বিষয় ও গোয়েন্দা শাখা কাজ করছে। সেখানে তাদের সম্পর্কে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, কমিশনের অনুমোদনক্রমে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের ৬৫ সাবেক মন্ত্রী-এমপির অকল্পনীয় সম্পদ বৃদ্ধির তদন্তের দাবিতে রোববার দুদক চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। তার চিঠিতে দেওয়া তালিকায় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা: জাহিদ মালেক, সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. রহমান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামসহ আরও অনেকের নাম রয়েছে। বলা হয়, ৫ থেকে ১৫ বছরের ব্যবধানে তাদের সম্পদ ১২৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪৩ হাজার শতাংশে।
যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ: সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৬ সাল থেকে তার মালিকানাধীন কোম্পানিটি যুক্তরাজ্যে ৩৫০ টিরও বেশি ক্রয় করে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। প্রায় ২০০ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড (২,৭৭০ কোটি টাকা) মূল্যের সম্পত্তি। যুক্তরাজ্যের কোম্পানি হাউস কর্পোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকী চার্জ এবং এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ভিত্তিতে ব্লুমবার্গ নিউজ এজেন্সি দ্বারা পরিসংখ্যানগুলি পাওয়া গেছে।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, চোরাচালানের টাকায় সাইফুজ্জামান ব্যবসা গড়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফ্ল্যাট কিনেছেন। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ৯টি ফ্ল্যাট। তিনি ২০০৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার শুরু করেন। তিনি দেশে নাহার ম্যানেজমেন্ট ইনকর্পোরেটেড নামে একটি কোম্পানি খোলেন। ২০০৫ সাল থেকে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের নামে ৯টি প্লট বা ফ্ল্যাট কিনেছেন। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৬টি ফ্ল্যাট বিক্রির রেকর্ডও রয়েছে তার। অন্যদিকে লন্ডনে তার স্ত্রী রুখমিলা জামান ও মেয়ে জেবা জামানের নামে কোম্পানি রয়েছে। পারিবারিক মালিকানাধীন ব্যবসায়িক গ্রুপ আরামিতের নামেও একটি কোম্পানি রয়েছে, অভিযোগে বলা হয়েছে।
আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ: ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের দাবিতে গত ২৭ জুন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী ড্যাককে চিঠি দেন। সেই আবেদনের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু অভিযোগ দুদকে জমা পড়ে। যা যাচাই-বাছাই করে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।