ক্যাশ সার্ভার স্থানান্তরে ইন্টারনেটের খরচ বাড়াবে বলে আশঙ্কা প্রযুক্তিবিদদের
শুক্রবার থেকে স্থানীয় পর্যায়ের ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ক্যাশ সার্ভার স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি)। ফলস্বরূপ, প্রযুক্তিবিদরা আশঙ্কা করছেন যে ভোক্তারা ইন্টারনেট ব্যবহারে ধীরগতি হবে, বিশেষ করে ইউটিউব এবং ফেসবুকে ভিডিও দেখতে। এছাড়া এমন সিদ্ধান্তে ইন্টারনেটের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এ কারণে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা আইএসপিগুলো এই সিদ্ধান্তকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছে। তবে বিটিআরসি বলছে, ইন্টারনেট সেবার ব্যতিক্রম হবে না। একটি ক্যাশে সার্ভার হল একটি অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক বা স্থানীয় ডেটা স্টোরেজ সিস্টেম যা গুগল, ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো সাইটের প্রধান সার্ভারের সাথে সংযুক্ত। বাংলাদেশের গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন গুগল, ইউটিউব বা ফেসবুকের মতো প্লাটফর্ম। তাদের প্রধান সার্ভার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এই ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মগুলি বিভিন্ন আইএসপি, অর্থাৎ ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীকে নগদ সার্ভার প্রদান করে। এই ক্যাশে সার্ভারের কাজ হল সার্বক্ষণিক মেইন সার্ভারের সাথে সংযুক্ত থাকা থেকে মূল সার্ভারের তথ্য ক্যাশে সার্ভারে নিয়ে আসা। এর সুবিধা হল যখন একজন ব্যবহারকারী ইউটিউব বা ফেসবুকের মতো একটি সেবা ব্যবহার করেন, তখন এটি আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্ভারের সন্ধান করবে না, তবে কাছাকাছি একটি স্থানীয় সার্ভার থেকে ডেটা দেখাবে। কারণ স্থানীয় ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীর ক্যাশে সার্ভারে বিষয়বস্তু স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়। একই বিষয়বস্তু পরবর্তীতে ওই দেশের কোনো গ্রাহক অনুসন্ধান করলে, স্থানীয় সার্ভার থেকে সামান্য ডেটা ব্যবহার করে খুব দ্রুত ডেটা পুনরুদ্ধার করা যায়। ফলে আমেরিকা বা ইউরোপ থেকে পুরো নেটওয়ার্ক পুনরায় ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। এক কথায়, ক্যাশ সার্ভার যত কাছাকাছি হবে গ্রাহকরা তত দ্রুত সেবা পাবেন বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিদরা। ক্যাশে সার্ভার মূলত প্রধান সার্ভার এবং ব্যবহারকারীদের মধ্যে দূরত্ব কমাতে কাজ করে। পাশাপাশি সার্ভার ও ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের চাপ নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন বাংলাদেশে ক্যাশ সার্ভার স্থানান্তরের পর গুগল, ইউটিউব, ফেসবুক ব্যবহার করার সময় যদি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের ওই সার্ভার থেকে ডাটা নিতে হয়, তাহলে গতি অনেক কম হবে। স্থানীয় গ্রাহক আগে যে অর্থ ও গতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন, এখন নগদ সার্ভারের ব্যাপক স্থানান্তরের ফলে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি গতিও কমবে। যা আবার গ্রাহকদের ওপরই বর্তাবে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেড় দশক আগেও স্থানীয় পর্যায়ে ক্যাশ সার্ভার না থাকায় দেশে ইন্টারনেট খুবই ধীরগতির ছিল। সব ধরনের ট্রাফিক যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে। পরবর্তীতে গুগল, ইউটিউব, ফেসবুকের মতো টেক জায়ান্টগুলো গ্রাহকদের দ্রুত সেবা দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্যাশ সার্ভার স্থাপন শুরু করে। পরবর্তী পর্যায়ে, এটি স্থানীয় আইএসপিতে স্থানান্তরিত হয়। ফলস্বরূপ, ব্যান্ডউইথ খরচ অনেক কমে যায়, এবং ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাংলাদেশে এসব সার্ভার স্থাপনের জন্য তারা বিটিআরসি থেকে কোনো অনুমোদন পায়নি বলে জানিয়েছে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি। এখন, এই অননুমোদিত আঞ্চলিক সার্ভারগুলি অপসারণ ইউটিউব এবং ফেসবুকে ভিডিও সামগ্রীর গতিকে প্রভাবিত করবে, প্রযুক্তিবিদরা জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, যারা স্থানীয় আইএসপির ক্যাশ ব্যবহার করতেন তাদের এখন সিঙ্গাপুর, ভারত বা যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের সার্ভার ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে টেকনিশিয়ান সুমন আহমেদ সাবির বলেন, এক সঙ্গে অনেক ক্যাশ সরানো হচ্ছে, কিছু সরানো হতে পারে। বিশেষ করে প্রান্তিক এলাকায় ডেটা বেশি খরচ হলে গতি কিছুটা কমে যাবে। সেক্ষেত্রে ইন্টারনেটের দাম বাড়বে।