ছাগলকান্ড: মায়ের সঙ্গে দেশ ছেড়েছেন ইফাত

0

ছাগলের ঘটনায় আলোচিত তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে, যদিও তিনি গত বুধবার এই পরিচয় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। সে তার ছেলের আসল পরিচয় গোপন করে। মতিউর দাবি করেন, ইফাত তার ছেলে নয়, তিনি নামে কাউকে চেনেন না। তবে অনুসন্ধানে মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে ইফাতের কথা জানা গেছে।

এখন শোনা যাচ্ছে মা শাম্মী আক্তার শিবালি ভাই ইরফানকে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন মুশফিকুর রহমান ইফাত।

মতিউর রহমান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য এরই মধ্যে দেশে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের অবস্থান পাওয়া গেছে। ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট প্লট রয়েছে। ছাড়া সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে নিজের নামে এবং শেয়ারবাজারে নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে এফডিআরে পঞ্চাশ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এমনকি ছাগল কেলেঙ্কারিতে আলোচিত যুবকদের জন্য তিনি প্রাডো, প্রিমিও এবং ক্রাউনের মতো ৪টি বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন। এসব গাড়ি তার বিভিন্ন কোম্পানির নামে নিবন্ধিত। দামি পাখিও কিনেছেন।

রাজস্ব বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরকারকে বঞ্চিত করে নিজের আখের গোছানো হয়েছে আখের। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের প্রায় পুরোটাই স্ত্রী-সন্তান আত্মীয়-স্বজনের নামে গড়ে উঠেছে। দুজনে মিলে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। দামি গাড়ি, বাড়ি কিনেছেন। ৩১ লাখ টাকারও বেশি মূল্যের রোলেক্স ঘড়ি পরেন এই কর্মকর্তা। তবে নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন তিনি।

এদিকে প্রভাবশালী এই সরকারি কর্মকর্তা চাকরিজীবনের শেষ প্রান্তে এসে সম্প্রতি ছাগল কেলেঙ্কারিতে ধরা পড়েছেন। ১৫ লাখ টাকায় কোরবানির জন্য কেনা ছেলের ছাগল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বাবার পরিচয় জানা যায়। ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলে মতিউর প্রথম পক্ষের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকির সঙ্গে আলোচনা করে পারিবারিক নাটক সাজান। মিডিয়ার সামনে ইফাতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে মুশফিকুর রহমান।

একপর্যায়ে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী শাম্মী আক্তার শিবালী, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ইরফান দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। বুধবার তারা চট্টগ্রাম হয়ে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে উল্লেখিত তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, মতিউর রহমান একাদশ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৩ সালের এপ্রিল ট্রেড ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। একপর্যায়ে প্রশাসন ক্যাডারে ট্রেড ক্যাডার একীভূত হলে মতিউর অ্যাডমিন ক্যাডারে যোগ না দিয়ে কাস্টমস ক্যাডারে যোগ দেন। এর আগে, তিনি ১৯৯০-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত পল্লী কর্মসংস্থান ফাউন্ডেশনে (পিকেএসএফ) কাজ করেছেন। বরিশালের মুলাদী উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম হাওলাদারের ছেলে মতিউর কাস্টমসে যোগদানের পর টাকার লোভে বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ রয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মতিউর ২০০০ সালের দিকে সেগুনবাগিচা কাস্টমস বন্ড অফিসে যোগদান করেন। সেখানে কর্মরত থাকাকালীন বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে তাকে টেকনাফে বদলি করা হয়। বদলির ছয় মাসের মধ্যে তৎকালীন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে ঢাকার শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগে পদায়ন পান। দীর্ঘদিন এখানে দায়িত্ব পালনের পর ২০০৬ সালের শেষ দিকে তাকে চট্টগ্রাম বন্দর হাউসে বদলি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *