বঙ্গবন্ধু টানেলে হাঁটাহাঁটি, সেলফি তোলা, গাড়ির রেস সবই চলছে

0

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে কার রেসিং, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, ভেতরে দাঁড়িয়ে ছবি তোলাসহ নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চলছে। কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে। তবে দায়ী কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Description of image

আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

পুলিশ সুড়ঙ্গের ভিতরে বেশ কয়েকটি গাড়ি রেসিং শনাক্ত করেছে। যারা নিয়ম লঙ্ঘন করেছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাতে সাতজন চালকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলটি ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়। এরপর ২৯ অক্টোবর টানেলটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই রাতে, একদল যুবক তাদের গাড়ি টানেলের মধ্যে দিয়েছিল। টানেলের সিসিটিভিতে তা ধরা পড়ে।

একই দিন আনোয়ারা টোল প্লাজা এলাকায় একটি প্রাডো জিপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা খায়।

৩০ অক্টোবরের আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে একটি গাড়ি টানেলের ভিতরে আরেকটি গাড়ির পেছনের দিকে যাচ্ছে। টানেলের ভিতরে গাড়ির গতি প্রতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা ছিল অনেক কম।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক আবু তারেক ও সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম ধেমশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিদুয়ানুল ইসলামকে টানেলের ভেতরে গাড়ি থামিয়ে সেলফি তুলতে দেখা যায়। টানেলের ভিতরে থামানো এবং ছবি তোলা নিষেধ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, টানেলের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে ঘটনা ঘটছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রথম থেকেই নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না নিলে টানেলে দুর্ঘটনা বাড়বে। সুড়ঙ্গের ভিতরে যারা আইন ভঙ্গ করেছে তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।তা না হলে টানেল নিরাপদ করা যাবে না।এখনই ব্যবস্থা নিয়ে এসব ঘটনা বন্ধ করতে হবে।

২৯ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে টানেলটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ওই দিন মধ্যরাতে একদল তরুণ-তরুণী স্পোর্টস কার নিয়ে টানেলের মধ্যে দৌড় দেয়। পরে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অন্তত ১০টি গাড়ি টানেলের ভিতরে রেসে অংশ নেয়। এ সময় একটি গাড়ি আরেকটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করে। যদিও টানেলে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানো যায়। এ ঘটনার পর পুলিশ গাড়ির মালিককে শনাক্ত করতে কাজ শুরু করে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে এ পর্যন্ত চারটি গাড়ি শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি গাড়ি শনাক্ত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

টানেলের সহকারী প্রকৌশলী (টোল অ্যান্ড ট্রাফিক) তানভীর রিফা বলেন, “সেতু কর্তৃপক্ষ টানেল ব্যবহারকারীদের জন্য ১৪টি বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে। টানেলে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলতে পারে। কিন্তু গাড়িগুলো যেভাবে রেসেছে তা দেখে মনে হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।এ ছাড়া টানেলে ছবি তোলা, টানেলের ভেতরে গাড়ি ঠেলে দেওয়ার মতো বিষয়গুলো আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।তবে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, টানেলে সবেমাত্র যান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে শীঘ্রই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

টানেলের এক প্রান্ত কর্ণফুলী থানায়। অপর প্রান্ত পতেঙ্গা থানায়। কর্ণফুলী থানার ওসি জহির হোসেন গতকাল বিকেল ৫টায় বলেন, টানেলের ভেতরে দৌড় প্রতিযোগিতার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। টানেল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করলে মামলা করা হবে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সুলতানা বলেন, টানেল কর্তৃপক্ষ গাড়ির নম্বর খতিয়ে দেখবে এবং রেসের ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের করবে। এরপর সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করা হবে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এখন পর্যন্ত চারটি গাড়ি শনাক্ত করা হয়েছে। নম্বরগুলো দেখে বিআরটিএ থেকে গাড়ির মালিককে খুঁজে বের করব। মামলাটি তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, টানেলে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। মানুষ আসলে প্রথমদিকে অতিরিক্ত উত্তেজনা থেকে এই ধরনের কাজ করছে।

৪২ লাখ টোল আদায়

টানেলের সহকারী প্রকৌশলী (টোল ও ট্রাফিক) তানভীর রিফা, ২৯ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় ৪২ লাখ টোল আদায় হয়েছে। প্রায় ১৯ হাজার যানবাহন থেকে এই টোল আদায় করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।