জাতিসংঘের ত্রুটিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাল বাংলাদেশ

0

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের ত্রুটিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার। বুধবার জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়ে প্রতিবাদ জানায় সরকার।

বার্তায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন বলেছে, “বিএনপি একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অসাংবিধানিক দাবির নামে সহিংসতা ও অনৈক্যের নজিরবিহীন প্রদর্শন করছে। এতে বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে মর্মাহত। .

বিএনপির অনুরোধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাদের ২৮ অক্টোবর কিছু শর্তে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। তবে বিএনপি কর্মীরা রাস্তায় সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, ব্যক্তি ও সম্পদের ওপর হামলা চালায়। এ ধরনের ব্যাপক সহিংসতার প্রধান শিকার হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, নিরীহ নাগরিক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সম্পত্তি।

জাতিসংঘে পাঠানো ‘নোট ভার্বেলে’ (কূটনৈতিক চিঠি) বলা হয়েছে, “ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে যে পুলিশের একজন সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”

হামলা ও আহত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বাস, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের বাসভবন ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ হাসপাতাল চত্বর ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

ভাংচুর করা হয় বেশ কয়েকটি পুলিশ বক্স। সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানদের ওপর হামলা হয়। এমনকি বিএনপির এমন ক্রমাগত নৃশংসতার মুখেও বাংলাদেশ সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত সংযম ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। জনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তারা সর্বনিম্ন শক্তি প্রয়োগ করেছে।

বাংলাদেশ বলেছে যে মানবাধিকারের হাইকমিশনারের বিবৃতিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে “মুখোশধারীরা” যারা মোটরসাইকেলে হামলা করেছিল তারা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছিল, যা বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে।

এর আগে বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, জাতিসংঘের বিবৃতি ত্রুটিপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকারের এই ত্রুটিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাবে। গতকাল রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার আশা করছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় তাদের আগের বক্তব্য সংশোধন করে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করবে। অন্যথায় প্রতিষ্ঠান গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।

গত সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘর্ষে ৯ জনের মৃত্যুর ঘোষণা দেন। জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র লিজ থ্রাসেল পরের দিন মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এই সংখ্যা ১১ বলে উল্লেখ করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার ঢাকায় সংঘর্ষের সময় পুলিশের এক সদস্য ও যুবদলের স্থানীয় এক নেতা নিহত হন। পরদিন হরতালে ১৩ জেলায় সহিংসতায় চারজন মারা যান। তাদের মধ্যে পৃথক ঘটনায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা অবরোধের প্রথম দিনে আরও চারজন নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের মুখপাত্রের দেওয়া এক বিবৃতিতে হামলাকারীদের পরিচয় সম্পর্কে বিএনপির অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সহিংসতায় সরকার সমর্থিত লোকজনের সম্পৃক্ততারও ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের বক্তব্যের বর্ণনা খুবই ত্রুটিপূর্ণ এবং বাস্তবতা বর্জিত। আমরা এর প্রতিবাদ পাঠাব। আমরা মনে করি তাদের সঠিকভাবে জানানো হয়নি।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের তথ্যে ঘাটতি রয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের তথ্যে ঘাটতি থাকা খুবই দুঃখজনক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *