‘নতুন পাঠ্যক্রমের অপপ্রচারের পিছনে কোচিং-গাইড ব্যবসায়ীরা’
নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন নিয়ে ভুল তথ্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। দীপু মনি। তিনি বলেন, প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এই অপপ্রচার শুরু হয়। পরে তা মানববন্ধনে সংগঠিত হয়। এই ভুল তথ্যের মূলে রয়েছে কোচিং ও গাইড ব্যবসায়ীরা।
আর এই অপপ্রচারে ইন্ধন যোগায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা।
সোমবার দুপুর ১টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) আয়োজিত ‘নতুন পাঠ্যক্রম প্রচার’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এ দাবি করেন। দীপু মনি। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নতুন পাঠ্যক্রম নিয়ে চলমান বিভিন্ন বিভ্রান্তি নিয়ে আলোচনা করেন এবং এসব গুজবের সমাধান করে প্রতিটি সমস্যার ব্যাখ্যা পেশ করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘২০২২ সালে কয়েকটি স্কুলে নতুন পাঠ্যক্রমের পাইলটিং কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
এ বছর প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে পাঠদান শুরু হয়েছে। ফলস্বরূপ, এই বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কোচিং বা প্রাইভেট টিউশন এবং নোট গাইডের প্রয়োজন ছিল না। ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে নতুন কারিকুলাম নিয়ে ভুল তথ্য ছড়াতে থাকে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা নতুন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তাদের ধর্মঘট সফল না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকের চাকরির পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই ছাত্রদের অনেকেই একবার বা দুবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ফলে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তাদের ভোট পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নভেম্বরের মধ্যে সব পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছি। এরই মধ্যে একটি রাজনৈতিক দল অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে পরীক্ষা নষ্ট করে এসব কর্মসূচি করা যাবে না।
দীপু মনি বলেন, ‘নতুন কারিকুলামে যেসব শিক্ষার্থী পড়ছে, তারা একই পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা দিতে পারবে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে একক ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বছরে ২-৩টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত স্কোর অনুযায়ী পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও একক ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক করা হচ্ছে। ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি-এনটিএ গঠন করতে ২-৩ বছর সময় লাগবে। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ থেকে NTA গঠন না হওয়া পর্যন্ত একটি একক ভর্তি প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে।
চাকরির খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, “উন্নত দেশের মতো সরকারি-বেসরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় সার্টিফিকেট ও মুখস্থ করার আগে দক্ষতা যাচাই করা হবে। ইতিমধ্যেই অনেক বড় বেসরকারি কোম্পানি দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী দেখেছে অনেকের চাকরি। দেশ বিদেশের বড় বড় কোম্পানি তাদের পড়াশোনার সময়।তারা সার্টিফিকেটের কারণে নয়, দক্ষতার কারণে এসব চাকরি পেয়েছে।
নবম ও দশম শ্রেণী থেকে বিভাগীয় বিভাজন অপসারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “এ নিয়ে বিভিন্ন ভুল তথ্য রয়েছে। আগে এই স্তরে বিভাগ ছিল না। আইয়ার খান ১৯৫৯ সালে শিক্ষার্থীদের ওপর বিভাগীয়করণ চাপিয়ে দেন। শিক্ষকরা করতেন। কোন শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে পারবে তা নির্ধারণ করে।এভাবে শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে।
দীপু মনি বলেন, “নতুন পাঠ্যসূচিতে দামি উপকরণ ব্যবহারের কোনো উল্লেখ নেই। শহরে বা গ্রামের কোথাও শিক্ষকরা না বুঝেই এ ধরনের কাজ করতে পারেন। আমরা তা না করার পরামর্শ দিই। সহজলভ্য ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহারে উৎসাহিত করুন। এর মাধ্যমে আমরা একটি টেকসই পদ্ধতি অবলম্বন করার প্রক্রিয়াও চালু করতে চাই।
নতুন কারিকুলামের কারণে শিক্ষকদের বাড়তি চাপে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য নভেম্বরের মধ্যে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার দেওয়া হবে। এ বছর শিক্ষার্থীদের বার্ষিক মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকরা এই সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। সফটওয়্যারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক মূল্যায়ন ছাড়াও মূল্যায়ন কার্ড তৈরি ও সংরক্ষণের কাজ করা হবে।
অভিভাবকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা মানসিক জগতে পরিবর্তন আনা। ভালো স্কুলে ভর্তির জন্য, সামাজিকীকরণের জন্য এবং ভালো গ্রেড পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল প্রতিযোগিতায় ফেলা হয়েছিল। চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনাও আমরা দেখেছি। নতুন কারিকুলামে এ ধরনের কোনো প্রতিযোগিতা থাকবে না। শিক্ষা হবে আনন্দের, শিক্ষার্থীরা পাঠ বুঝবে, হাতে কলমে শিখবে এবং দক্ষ হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের কয়েকটি স্কুলে পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের জন্য অভিভাবকরা মানববন্ধন করেছেন। কিছু অভিভাবক না বুঝে এই মানববন্ধনে অংশ নিলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের অধিকাংশই অভিভাবক নয়। দু-একটি স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।