সাড়ে আট মাসে দেশে ৭টি ভূমিকম্প হয়েছে, যা বড় ধরনের ভূমিকম্পের ইঙ্গিত

0

চলতি বছরের সাড়ে আট মাসে বাংলাদেশ ও এর আশপাশে ৩১টি ভূমিকম্প হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর মধ্যে সাতটি ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে দেশের সীমান্তে এবং দেশের অভ্যন্তরে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে ভূমিকম্প বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.২। এই মৃদু ভূমিকম্পটি 12:49:56 pm এ ঘটে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে (উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিক)।

টাঙ্গাইল, নরসিংদী ও ঢাকার কিছু মানুষ মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ও ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির বলেন, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল টাঙ্গাইল শহরের আশপাশে হতে পারে। তবে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণকারী সরকারি সংস্থা ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তি টাঙ্গাইলের সখীপুরে। সংস্থার মতে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে ৩.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।

ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, গতকালের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ মাত্রার, যার উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর ঘোড়াশালে। যাইহোক, সিসমোলজিস্টরা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি, ভারতের সরকারি সংস্থা যা ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ করে, থেকে পাওয়া তথ্যকে আরও গ্রহণযোগ্য বলে মনে করে। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য ও ভূমিকম্প বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ভারতীয় প্লেটের ভেতরে ভূমিকম্প হয়েছে। সাধারণত দুটি প্লেটের সংযোগস্থলে ভূমিকম্প হয়। এটা প্লেট মধ্যে ঘটেছে.

ভারতীয় ও বার্মা প্লেটের পারস্পরিক গতির প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় প্লেটের মধুপুর রেঞ্জের সখিপুরে অগভীর গভীরতায় ভূমিকম্পটি ঘটে। এটা মধুপুর দোষের অধীনে হতে পারে। মধুপুর চ্যুতি উত্তরে শেরপুর থেকে দক্ষিণে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। মধুপুর গড় এই দোষে মিথ্যা। ৮-১২ বছর আগেও টাঙ্গাইল-মির্জাপুর অঞ্চলে ৪ থেকে ৪.৩ মাত্রার বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প হয়েছিল।

আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ৫ মে ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে দোহায় যে ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল, তা মানুষের মধ্যে বেশ আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। একই মাসের ১৭ তারিখে আরেকটি ৩.৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ঢাকা থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে নেত্রকোনায় এর উৎপত্তিস্থল।

গত ১৬ জুন সিলেটের গোলাপগঞ্জে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। তবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয় চলতি বছরের ১৪ আগস্ট। ৫.৫ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে। শুধু এ বছরই নয়, ২০ বছরে দেশে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পের মধ্যে এটিই ছিল সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প। ১৫ দিনের মধ্যে ২৯ আগস্ট সিলেটে ৩.৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়।

ভূমিকম্প মনিটরিং অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির বলেন, বাংলাদেশে যতগুলো ভূমিকম্প হয়েছে তা বলা যাবে না, তবে অনেকগুলো অনুভূত হয়েছে।

যাইহোক, ভারত সরকারের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থার ভূমিকম্প সংঘটনের বিভিন্ন মানচিত্রের বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে সীমারেখা (বা সীমানার কাছাকাছি) এবং বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি ভূমিকম্প হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী গতকাল বলেন, “এক বছর আগেও এত ভূমিকম্প দেখা যায়নি। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকেই ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশ অনেক বেড়েছে।বাংলাদেশের সীমানার ২০০ কিলোমিটারের মধ্যেও বড় ভূমিকম্প হলে আমাদের ক্ষতি হবে।

সামগ্রিকভাবে দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের প্রবণতা সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যমুনা সেতুটি ১৮৮৫ সালে টাঙ্গাইল ও মধুপুর এলাকায় সংঘটিত ৭ (৭.৫) মাত্রার ভূমিকম্পের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছিল। ১০১৮ সালে সিলেটে একটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ৭.৬ মাত্রার। তার মানে ঐতিহাসিকভাবে এসব জায়গায় ভূমিকম্প হয়েছে। এই ছোট ভূমিকম্পগুলি আরও বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিতে পারে। আমরা যেমন বলি, প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ বছরে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয় এবং প্রতি ২৫০ বছর বা তার বেশি সময়ে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। সে অনুযায়ী আবারও বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে।

তবে অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ১০০ বা ২০০ বছর দিয়ে পুরোপুরি বলা যাবে না। আবার ভূমিকম্প হওয়ার এক থেকে দুই হাজার বছরও হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *