আদালতকেন্দ্রিক কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি
সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে আদালতকেন্দ্রিক কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি। এ পর্যায়ে আদালতের বিভিন্ন রায়ের প্রতিবাদে আদালত প্রাঙ্গণে সমাবেশ, সেমিনার ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে দলটি। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সরকার আদালতকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে নির্যাতন করছে।
নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করতে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে কর্মসূচি পালনের এখনই উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন তারা।
নীতিনির্ধারকরা জানান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকে নেতারা আদালতকেন্দ্রিক কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ দেন। ওই বৈঠকের প্রস্তাব নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, আদালত কেন্দ্রিক কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সকল সদস্য একমত হয়েছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সরকার এত দিন পুলিশকে ব্যবহার করছে বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। সেই মামলায় সাজা দেওয়ার জন্য এখন আদালত ব্যবহার করা হচ্ছে।
বৈঠকে আলোচনার একপর্যায়ে এক নেতা বলেন, নিউইয়র্ক টাইমসের খবরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবাই জানতে পেরেছে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা কেমন চলছে। ইউনূসের মামলার বিষয়ে আদালতে অভিযোগ করে একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাহলে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নীরব থাকবে কেন?
আদালতকেন্দ্রিক কর্মসূচির পরিকল্পনা তুলে ধরে দলটির এক নেতা বলেন, বৈঠকে আদালতের রায়ের প্রতিবাদে এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সমাবেশ থেকে বিচার না পাওয়ায় আদালতের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।
এর মধ্যে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা চলছে, সেসব মামলা কীভাবে আদালতে বিচার হচ্ছে তা তুলে ধরতে সেমিনার হবে। এরপর আদালত চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। একই দাবিতে একই দিনে ঢাকায় সমাবেশ করতে পারে বিএনপিও।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘শীঘ্রই নতুন কর্মসূচি আসবে। আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আছি। ধারাবাহিক আন্দোলনে পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন করতে হয়। এটাই আন্দোলনের ধারা।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা দলের অন্য সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি চূড়ান্ত আন্দোলন সফলভাবে শেষ করতে হবে। কারণ বিএনপি নেতারা মনে করছেন, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
গত রোববার বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে সিনিয়র নেতারাও একই অভিমত ব্যক্ত করেন। সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলনে পরিবর্তন আনতে হবে বলেও জানান তারা। তফসিল ঘোষণার আগে অক্টোবরের মাঝামাঝি আন্দোলন শেষ করতে হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচি ঘোষণার আগে আজ একযোগে আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তাদের পরামর্শে আদালতকেন্দ্রিক আন্দোলনের পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।
বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে দেখা যায়। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মেডিকেল বোর্ড সংবাদ সম্মেলন করবে বলে জানা গেছে। এরপর দলীয় সংবাদ সম্মেলন করবে বিএনপি। স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, লিভারের জটিলতায় খালেদা জিয়ার পেটে পানি রয়েছে। লিভারের সমস্যা কিডনি, হার্টসহ অন্যান্য অঙ্গে জটিলতা সৃষ্টি করছে।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আদালতে দেওয়া সাজা, নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, দেশের অরাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা ছাড়াও শুধু বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা শুরু করে তিন-চার দিন পর মামলার তারিখ দেওয়া হচ্ছে, এমনকি রাতেও আদালতের কার্যক্রম চলছে। ”
এর আগে কয়েকদিন সংবাদ সম্মেলনে রিজভী দাবি করেন, সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৩৪টি মামলায় ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ৪৯২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত ২৮ ও ২৯ জুলাই ঢাকায় গণমিছিল এবং রাজধানীর প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে সারাদেশে ৩৩১টি মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৩০ জনকে। গ্রেফতার করা হয় এক হাজার ৬৫০ জনকে।