বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা নিষ্পত্তি তোড়জোড়

0

বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা নিষ্পত্তিতে গতি এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি মামলার রায় হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি লক্ষণীয়। আদালতে অনেক মামলা দ্রুত শেষ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শম্বুকগাতী মামলার আকস্মিক গতিকে ‘রাজনৈতিক চাল’ হিসেবে দেখছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, এর পেছনে উদ্দেশ্য অযোগ্য ঘোষণা ও আন্দোলন দমন করা। যদিও এটাকে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম হিসেবে দেখছেন আদালত-সংশ্লিষ্টরা।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে মামলার বিচারকাজ শেষ হয়েছে। শ্রম আদালতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলায় প্রমাণ নেয়া হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের মামলা নিম্ন আদালতে চলবে বলে সম্প্রতি রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে করা মামলার বিচার নিম্ন আদালতে চলবে বলে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের উচ্ছেদের অভিযানে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্রসহ দুইজনের বিরুদ্ধে করা মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী জয়নাল আবেদীন বলেন, সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক মামলায় অবৈধ রায় দিচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব মামলার রায় ও সাজা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, ধারাবাহিক মামলা রক্ষণাবেক্ষণ না করে যেসব মামলা রাজনৈতিক, সেগুলোকে এগিয়ে এনে দ্রুত সাজা দেওয়া হচ্ছে। সরকার শাস্তির মাধ্যমে অতীতের মতো বিরোধী দলকে দমন করার চেষ্টা করছে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, জনস্বার্থের মামলাগুলো বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে। কারণ, এসব মামলা সরকারি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে এবং সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকারের কোনো নির্দেশনা নেই। তিনি উল্লেখ করেন, সাত বছর ধরে দেশের রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত মামলার তদন্ত চলছে।

সম্প্রতি রাজনৈতিক সহিংসতার শতাধিক মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তদন্তের পর যেসব মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া মনিটরিং করার জন্যও মনিটরিং কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে সন্ত্রাসী হামলা সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি এবং স্থগিত মামলাগুলো সক্রিয় করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

বিএনপি নেতাদের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, বিএনপি সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পুরনো মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে এবং দ্রুত সাজা প্রদানের জন্য সরকার ‘পিক অ্যান্ড সিজ থিওরি’ অবলম্বন করেছে। সামনে আসন্ন নির্বাচন। তাদের নির্বাচনে অযোগ্য করার জন্য এই প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সালে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় গত ২রা আগস্ট ঢাকার জজ আদালত তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ড. জোবায়দা রহমানকে যথাক্রমে ছয় বছর ও তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। অভিযোগ গঠনের ৩৪ দিনের মধ্যে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া গত ৩০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা দুটি দুর্নীতি মামলায় বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও আমান উল্লাহ আমানের বিচারিক আদালতের দেওয়া কারাদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট।

এ ছাড়া গত ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রের’ মামলায় শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের একাধিক মামলা দীর্ঘদিন ধরে আদালতে বিচারাধীন।

এরই মধ্যে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মো. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি ২২ আগস্ট শুরু হয়। ২০২১ সালের মামলায় আদালত ৬ জুন বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। তার আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ করেন, দ্রুত সাজা ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে।

এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আদালত শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য বিচারাধীন মামলা গ্রহণ করে। তিনি বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে করা হচ্ছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিভিন্ন দুর্নীতির মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *