চট্টগ্রামে বন্যা।ভেসেছে ১০ হাজার পুকুরের মাছ, ক্ষেতে নেই সবজি।কয়েক দিনে দাম প্রায় দ্বিগুণ ।
পুকুরে মাছ নেই, ক্ষেতে সবজি নেই। বনের পানিতে সব ভেসে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাজারে। কড়া সরবরাহের কারণে হঠাৎ করে মাছ ও সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মেহনতি মানুষ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
স্থানীয় মৎস্য অফিস ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, অতিবৃষ্টি ও ভূমিধসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত পুকুরের প্রায় ১০ হাজার মাছ ভেসে গেছে। এতে মাছ চাষিদের প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। একইভাবে প্রায় ১০ হাজার একর বর্ষার সবজি পানিতে নষ্ট হয়েছে। এলাকার বাজারে মাছ ও সবজির ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে।
বন্যার আগে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন আকারের তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতো। মঙ্গলবার নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার ও কর্ণফুলী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। আগে প্রতি কেজি পাঙ্গাস ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২৩০ থেকে ২৮০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। বাজারে পুকুরে চাষ করা দেশি রুই নেই বললে ই চলে, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা রুই পাওয়া যাচ্ছে। পুকুরের রুই আগে প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৩৫০ টাকায় কম হচ্ছে না। মিয়ানমারের রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজিতে।
বন্যার আগে চট্টগ্রামের বাজারে সবজির ব্যাপক সরবরাহ থাকলেও এখন সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এ উপলক্ষে দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এলাকার সবজি ক্ষেত ভেসে গেছে। অন্য অঞ্চল থেকে সবজি এনে বিক্রি করতে হয়। তাই দাম বেড়েছে। বন্যার আগে পটোল ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন তা ৬০ টাকা। ৫০ টাকা কেজি দামের তিতকরলা এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। কাঁকরোল ৮০ টাকা ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। আলুর দামও বেড়েছে। আলু প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
১০ হাজার পুকুর ভেসে গেছে মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর চট্টগ্রামের পটিয়ায় ৮ হাজার পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ হয়েছে। পুকুরের প্রায় চার হাজার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে মাছ চাষিদের প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। জেলার চন্দনাইশ উপজেলায় ৪ হাজার ২৮৭টি পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ হয়। ভেসে গেছে ২ হাজার ৫৩৭টি পুকুরের মাছ। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সাতকানিয়ায় বন্যার পানিতে পুকুরের ৩ হাজার ৫০০ মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। লোহাগড়ায় পুকুরে ৫০০ মাছ ভেসে গিয়ে কৃষকের প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পটিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে ও সাতকানিয়া উপজেলা কর্মকর্তা মোঃ হাসান আহসানুল কবির জানান, বন্যা ও ভূমিধসের কারণে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার মৎস্য প্রকল্প ও পুকুর ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নষ্ট হয়েছে ১০ হাজার একর সবজি ক্ষেত
চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলায় উৎপাদিত মৌসুমি সবজির ওপর নির্ভর করে চট্টগ্রাম নগরীর বাজার। কিন্তু বন্যায় এ দুই উপজেলার অন্তত ১০ হাজার একর জমির বেগুন, মুলা, মিষ্টি কুমড়া, শসা, জাফরান, চিচিঙ্গাসহ সবজি নষ্ট হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চন্দনাইশের শঙ্খ নাদের চরসহ উপজেলার দুটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে এবং সাতকানিয়ার একটি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়নে বন্যায় সবজির ক্ষেত বিলীন হয়েছে। শুধু শঙ্খ নাদের চারার চাষিদের প্রায় ৫৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সাতকানিয়ায় ২১২ হেক্টর সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে।