বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে সংঘর্ষ।মাতুয়াইলবাসীর আতঙ্ক এখনো কাটেনি

0

শনিবার রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। তিনদিন আগে এ ঘটনা ঘটলেও এলাকার সাধারণ মানুষ এখনো আতঙ্কিত। ওই এলাকার চায়ের দোকানগুলোতে চলছে বিএনপির লাভ-ক্ষতি নিয়ে আলোচনা। এ ছাড়া অপরিচিতদের সঙ্গেও তারা এসব বিষয়ে কথা বলেন না। আমরা তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা তাদের অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এ নিয়ে কথা বলে আবার কোনো বিপদে পড়তে চাই না। তারা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

গতকাল সোমবার এলাকা পরিদর্শন করে এ চিত্র দেখা গেছে। ওই দিন আসমা আলী ফিলিং স্টেশন ও সন্তু ফিলিং স্টেশনের কাছে বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসের ভাঙা কাচ এখনও ঘটনাস্থলে রয়েছে।

ওই দিন মাতুয়াইলের শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সামনে ফুট ওভারব্রিজের নিচ থেকে আসমা আলী ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সড়ক থেকে যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত দুটি লেন ভিতরের দিকে চলে গেছে। হাসপাতালের পাশের গলিতে অবস্থান নেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা দফায় দফায় বেরিয়ে এসে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। হামলার মুখে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতারা পিছু হটে।

সন্তু ফিলিং স্টেশনের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিশা পরিবহনের বাসটি ফিলিং স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। বাসটি পেছনের দিকে থাকায় ফিলিং স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে কাউকে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে না। কাছের আবদুল্লাহ অ্যামিউজমেন্ট রাইডের দোকানে ক্যামেরায় ধরা পড়বে সব। দোকান বন্ধ পাওয়া যায়. তবে ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার জানান, আবদুল্লাহ বিনোদন রাইডের দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়ে গেছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় ফিলিং স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ কাউকে দেখানো ও দেওয়া সম্ভব নয়। বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন আসছেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।

হাসপাতালের নিরাপত্তা ইনচার্জ আব্দুল আজিজ অভিযোগ করেন, ওই দিন পুলিশ হাসপাতালের ভেতরে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। তিনি বলেন, হাসপাতালের ক্যান্টিনবয় সবুজ খান ও নিরাপত্তারক্ষী আবু হুরায়রা জরুরি গেট থেকে শিশুটিকে বাঁচাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই শিশুটির মৃত্যু হয়। তবে তার নাম পরিচয় জানাতে পারেননি।

সবুজের স্ত্রী রানী বেগম জানান, তার স্বামীর অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাকে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখতে হয়েছে। সবুজ শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডের কাঁচের দরজা ভাঙা। রোগী লাবলী আক্তার ও কয়েকজন নার্স জানান, সেদিন গোলাগুলি শুরু হলে হাসপাতালে হুলুস্থল পড়ে যায়। টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়া আসতে শুরু করলে নার্সরা সব জানালা বন্ধ করে দেয়। অনেক শিশু বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে।

সিকিউরিটি ইনচার্জ আব্দুল আজিজ জানান, শনিবার হাসপাতালে সরকারি ছুটি ছিল। কোনো রোগী ভর্তি করা হয়নি। জরুরী কক্ষে তিনজন ডাক্তার প্রতি শিফটে রোগী দেখেন। রোগীর চাপও বেশি ছিল।

বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলে পুলিশ ১৫-১৬ টি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে হাসপাতালে প্রবেশ করে।

ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার মধুসূদন দাস বলেন, দুটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাস্থল থেকে ফিলিং স্টেশন ও এর আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলি পর্যালোচনা করার সময়, ফুটেজগুলি দুর্বৃত্তদের চেহারা সম্পর্কে ভাল ধারণা দেয় না। তাই এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *