৯৯ শতাংশ হাসপাতাল হিসাবের বাইরে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুর তথ্য অসম্পূর্ণ
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর দৈনিক গণনা সম্পূর্ণ নয়। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ১ দশমিক ৩২ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর তথ্য প্রকাশ করছে এই সরকারি সংস্থা। হাসপাতালের বাকি ৯৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী অন্ধকারে রয়েছেন।
আংশিক তথ্য পূর্ণ হিসেবে প্রকাশ করা অনৈতিক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এতে রোগ নিয়ন্ত্রণে গতি আনতে হবে। গোপনে এ ধরনের চুরির কারণে মহামারীও হতে পারে। এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ মহামারীর পর্যায়ে রয়েছে। পরিস্থিতি এবং আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এবার সবচেয়ে বেশি হতে পারে। যাইহোক, বিপুল সংখ্যক হাসপাতাল এবং হাসপাতালের বাইরের রোগী এবং মৃত্যুর হিসাব নেই, যার ফলে রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিত্সা পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে।
করোনা মহামারী চলাকালীন জরুরি উদ্যোগ হিসেবে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের তথ্যও মানুষ জানতে পারে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এর উল্টো চিত্র।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত এক দিনে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ৭০টি হাসপাতালে রেকর্ড ২ হাজার ২৪২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত ২৩ বছরেও একদিনে এত বিপুল সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তির তথ্য দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদফতর। সব মিলিয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০,৬৮৫। এর মধ্যে ঢাকায় ১৮ হাজার ৮৮৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ১১ হাজার ৮০০ জন ভর্তি হয়েছেন। মাত্র ২১ জুলাই ভর্তি হয়েছেন ২২ হাজার ৭০৭ জন।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এডিস মশাবাহিত রোগে এ বছর মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৬৭ ছুঁয়েছে। তাদের মধ্যে জুলাই মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে ১২০ জন মারা গেছে।
জানা গেছে, সারাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধিত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৫ হাজার ২৭৫টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার ২০টি সরকারি ও ৫০টি বেসরকারি হাসপাতালে সরকারিভাবে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দেওয়া হয়। এর মধ্যে হাসপাতাল রয়েছে ৫ হাজার ২০৫টি। এমনকি অনেক রোগী আক্রান্ত হয়ে ঘরে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যার তথ্য সরকারের কাছে নেই। দেশে ৪২৪টি উপজেলা, ৬৪টি জেলা এবং ৩০টি বিশেষায়িত পর্যায়ের মেডিকেল হাসপাতালসহ মোট ৫৭৭টি সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি হাসপাতালের তথ্য দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ৪ হাজার ৬৯৮টি বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে ৫০টি তথ্য পাচ্ছে।
প্যাথলজিস্ট ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই এলাকায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যার অন্তত পাঁচগুণ বেশি। যদি আপনি একটি বৈজ্ঞানিক উপায়ে হাসপাতাল এলাকা, অর্থাৎ সেই শহর বা গ্রাম জরিপ করেন, তাহলে দেখা যাবে ১০ জন রোগী ভর্তি হলেও ৫০ জন চিকিৎসার বাইরে রয়েছেন। এনসেফালাইটিস (ব্যাকটেরিয়াল মস্তিষ্কের প্রদাহ) এই পদ্ধতিতে জরিপ করা হয়েছিল।
নজির আহমেদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তিনি বলেন, আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হলে জনগণ আতঙ্কিত হবে বলে সরকারের ভুল ধারণা রয়েছে। করোনার সময় সরকারের যৌথ উদ্যোগে সব হাসপাতাল থেকে তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন সরকার বিশেষ নির্দেশনা দিলে এ তথ্য পাওয়া সম্ভব।
জনস্বাস্থ্য অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, দুর্বলতা ও সমালোচনার ভয়ে সংশ্লিষ্টরা ডেঙ্গুর প্রকৃত চিত্র সামনে আনতে চান না। ঢাকার অনেক বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে, আমরা তাদের বিষয়ে খুব কম তথ্য পাচ্ছি। ডেঙ্গু যে মহামারী আকারে ছড়িয়েছে তা দেখাতে চায় না বিভাগ। মানুষ আতঙ্কিত হবে, সরকার কি করবে? নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে তারা এসব করছে। আবু জামিল ফয়সাল বলেন, পুরো ব্যবস্থাই ত্রুটিপূর্ণ। একটি ড্যাশবোর্ড থাকা দরকার ছিল, যেখানে সমস্ত সংস্থা যুক্ত হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারকা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বোঝা গেল কে দিচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডাঃ শাহাদাত হোসেন জানান, সারাদেশ থেকে সব তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। গত এক সপ্তাহে ২০টি নতুন হাসপাতাল যুক্ত হয়েছে। নির্দিষ্ট সার্ভারের সাথে জেলার তথ্য সংযুক্ত করে, স্বাস্থ্য বিভাগ এটি সব একসাথে প্রকাশ করে। তবে হাসপাতালের বাইরে রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা এখন যোগ হচ্ছে না। তিনি বলেন, একযোগে তথ্য দেওয়ার মতো সঠিক ব্যবস্থাপনা এখনো গড়ে ওঠেনি। তাই শুধু নির্দেশনা দিলেই সব তথ্য আসবে না। জনবল, অর্থ, প্রশিক্ষণের মতো অনেক বিষয় রয়েছে। একদিনে তাদের সম্পৃক্ত করা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হলেও জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় এখনও আসেনি।