ব্যবসায়ীরা বাজার তদারকিতে সহযোগিতা করছেন না

0

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে একাধিক টিম গঠন করে বাজার মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার কারণে এসব দলের কার্যক্রম বাজার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারছে না। অন্যদিকে অতিরিক্ত মুনাফাসহ কিছু অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনের দুর্বলতার কারণে বড় আকারের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সঙ্গে বৈঠকে এমন চিত্র তুলে ধরেন বাজার মনিটরিং-সংশ্লিষ্ট টিম লিডাররা।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর বাজার মনিটরিংয়ের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে গঠিত টিম লিডারদের সমন্বয়ক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পণ্যের মূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের সহকারী ট্রেড কনসালটেন্ট সভায় মনিটরিং কার্যক্রম তুলে ধরেন রিফাত হাসান। তিনি বলেন, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭২০টির বেশি বাজার পরিদর্শন করা হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দোকানে পণ্যের মূল্য প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মান্য নয়। তা ছাড়া বিক্রেতারা মনিটরিং কাজে যথাযথ সহযোগিতা করেন না। এমনকি মনিটরিং টিম দেখলেই বিক্রেতারা দোকান বন্ধ করে চলে যায়। অনেকেই পণ্যের এলসি খরচ ও ক্রয়মূল্য দেখাতে চান না। অনেকে অতিরিক্ত মুনাফা করলেও আইনি বাধার কারণে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এছাড়াও, সদস্যরা মনিটরিংয়ের জন্য দূরবর্তী বাজারে যেতে চান না। জরুরী কাজ থাকলে দায়িত্বশীলদের কেউ কেউ আগেভাগে জানান না। এতে পরিদর্শন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে বাজার মনিটরিংয়ে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

দ্রব্যমূল্য ও বাজারের অবস্থা পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের সভায় উপস্থাপিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে খুচরা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম আমদানির তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন। উৎপাদন মূল্যের চেয়ে কৃষিপণ্যের খুচরা মূল্যের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে তা স্থানীয় বাজারে প্রতিফলিত হয়নি।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বাজার মনিটরিং ইতিমধ্যে কিছুটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করলেও জনবল স্বল্পতার কারণে দেশব্যাপী বাজার মনিটরিং কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছে টাস্কফোর্স।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পণ্যের বাজারে মূল্যবৃদ্ধিসহ অন্যান্য অপরাধে ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে এ ধরনের অপরাধে ভোক্তা অধিকার মামলা হলে আদালত দুই লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারেন। তবে বর্তমানে বাজারে যে ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় তার জন্য এই শাস্তিগুলো অপর্যাপ্ত। তাই জরিমানা বাড়িয়ে ভোক্তা অধিকার আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের বিভিন্ন দিক এবং আইনের লঙ্ঘন উল্লেখ করে দোকান মালিক সমিতিকে চিঠি দেওয়ার পরামর্শ দেন। সভায় সমিতির দায় নির্ধারণে দোকান মালিক সমিতিকে ব্যবসায়ী সমিতির অধীনে নিবন্ধনের সুপারিশ করা হয়। রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংস্থা এফবিসিসিআই সহ সমস্ত দোকান মালিক সমিতিকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, দোকান মালিক সমিতির নিবন্ধন দেওয়া হলে সরকার ও ব্যবসায়ী উভয়ই লাভবান হবে। কারণ ব্যবসায়ীরা সমিতির মাধ্যমে সরকারের কাছে যেকোনো সমস্যা জানাতে পারেন। কেউ অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে পারে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রতিটি দোকান মালিক সমিতিকে জবাবদিহির আওতায় আনার উদ্যোগ ইতিবাচক। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সারাদেশে দোকান নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। এ জন্য তারা প্রতিটি বিভাগীয় বা জেলা পর্যায়ের দোকান মালিক সমিতির অধীনে নিবন্ধনের প্রস্তাব করেছে। তবে পদ্ধতি যাই হোক না কেন, বাজারের নিয়ন্ত্রণে যথাযথ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য দোকানগুলিকে একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামোতে নিয়ে আসা উচিত।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতা না থাকায় পণ্যের সরবরাহ ও দাম নির্ধারণ করে অস্বাভাবিক মুনাফা করছে কয়েকটি কোম্পানি। অসাধু ব্যবসায়ীরা কখনো ভোজ্যতেল, কখনো চিনি বা পেঁয়াজ, আদা, ডিম, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি সরবরাহের ঘাটতি সৃষ্টি করে টাকা লুটপাট করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *