রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন পরিচালনায় ‘অনমনীয়’। অন্যদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ‘অনড়’ বিএনপি। বৈঠকে কথার যুদ্ধ চললেও আপাতত সংলাপের সম্ভাবনা ক্ষীণ। উভয় পক্ষই ছাড় দিতে নারাজ। এ প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা উভয় পক্ষকে কিছু ছাড় দিতে এবং সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, তা না হলে যে কোনো পরিস্থিতির ‘দায়’ নিতে হবে রাজনীতিবিদদের।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সময় সরকারের ওপর নানাভাবে ‘চাপ’ অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক দৃশ্যপট ততই উত্তাল হয়ে উঠছে।
জাতীয় নির্বাচনের আর কয়েক মাস বাকি। ঈদুল আজহার আগে-পরে বিএনপির আন্দোলনে থমকে আছে। কয়েকদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে দলটি; প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারি দলের সংলাপের ‘ইঙ্গিত’ নাকচ করে তারা রাজপথে সিদ্ধান্ত নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। রাজপথে সংঘর্ষের হুঁশিয়ারি দিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন দল। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সরকার পতনে ‘এক ধাপ আন্দোলনের রূপরেখা’ ঘোষণা করতে যাচ্ছে বিএনপি। আওয়ামী লীগও সেপ্টেম্বর থেকে অলআউট লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হুমকির জবাবে পাল্টাপাল্টি হুমকি দিচ্ছেন দুই দলের শীর্ষ নেতারা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, রাজনীতিতে গতি আছে। সেই গতি আমাদের নির্বাচনে নিয়ে যাবে। এখন দেখছি পারস্পরিক বিরোধিতা, দোষারোপ ও অপপ্রচার। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, তত কমবে। আমরা দেখছি, বিদেশি অংশীদাররা নানাভাবে অনানুষ্ঠানিক সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এর একটি সামগ্রিক ফলাফল দেখতে পাচ্ছি। পারস্পরিক আস্থার সংকট নিরসন হলে রাজনৈতিক সংকটও মিটে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশে এমন রাজনৈতিক সংকটে সংলাপে বসার অর্থ নিজের পরাজয় মেনে নেওয়া। এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক দেশেই বিরাজ করছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয় না। আমাদের দেশে সংলাপ বা প্রস্তাব আসতে পারে, কিন্তু সংকট সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুই ভাগে বিভক্ত
এদিকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)সহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ‘চাপ’ দিচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করছে রাশিয়া ও চীন। তারপরও একের পর এক মার্কিন ও ইইউ প্রতিনিধি দল ও মিশন ঢাকা সফর করছে। এ ছাড়া ঢাকার বিদেশি মিশনগুলোও প্রকাশ্যে ও গোপনে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এমন চাপে কোনো সরকার আসেনি। তবে ক্ষমতাসীনদের এই চাপে বিরোধী দল কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন-পূর্ব পর্যবেক্ষণ দল আজ শনিবার ঢাকায় আসছে। জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত যাচাই-বাছাই করবে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল। এটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
একই সঙ্গে আগামী মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল সফরে আসছে। সফরকালে প্রতিনিধি দল আগামী নির্বাচন কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে তা জানতে চাইবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির আওতায় পড়ার চাপ রয়েছে ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের এ চাপ সহজে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। তাদের ক্ষমতা থেকে সরানোর ‘ষড়যন্ত্র’ বলে মনে করছে দলটি।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে সব ধরনের দেশি-বিদেশি চাপ মোকাবেলা করবে দলটি। এদিকে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা প্রকাশ্যে ও গোপনে আন্তর্জাতিক মহলে নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের আরও অনেক শক্তিশালী দেশ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সেসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করবে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু রাজনীতিকের ভূমিকাকে নব্য উপনিবেশবাদ বলে অভিহিত করেছে রাশিয়া। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টুইট করেছে যে মস্কো এই ধরনের পদক্ষেপকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে “নির্ভর হস্তক্ষেপ” বলে মনে করে।