কাউন্সিলর ও সহযোগীদের হত্যা: যা বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
আসরের নামাজের সময় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ সোহেল (৫২) ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা (৫০)। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা পাথরীপাড়ায় কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও অন্তত আটজন। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, বিকাল সাড়ে ৪টায় কুমিল্লার পাথরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে কাউন্সিলর অফিসে বসে ছিলেন কাউন্সিলর সোহেল। এ সময় কালো পোশাকধারী দুর্বৃত্তরা তার কার্যালয়ে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। অনেক দূর থেকে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার পর হতাহতদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টার দিকে সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ মারা যান। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে অ্যাডভোকেট সোহেল চৌধুরী, মো: রাসেল, মাজেদুল হক বাদল, রিজু মিয়া ও মো: জুয়েল রয়েছেন।
কাউন্সিলর সোহেলের ভাগ্নে মোহাম্মদ হানিফ জানান, সবাই আসরের নামাজ পড়ছেন। এ সময় প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ কানে আসে। গিয়ে দেখি মামা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আমি মামাকে কাঁধে তুলে নিই।
১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া জানান, মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন সন্ত্রাসী এসে গুলি চালায়। কাউন্সিলর সোহেল তার কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন।
হামলায় আহত জুয়েল জানান, তিনি গুলির শব্দ শুনে রাস্তায় বেরিয়ে যান। এ সময় আমার পায়ে গুলি লাগে। তারপর কি হল বলতে পারব না।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত জানান, সোহেলের শরীরে অন্তত ১০টি গুলি করা হয়েছে। এলাকায় তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। আমরা হত্যার বিচার চাই।
কুমিল্লা কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল আজিম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হামলা হয়েছে। হামলাকারীদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
মোঃ সোহেল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রও ছিলেন। তিনি ২০১২ এবং ২০১৮ সালে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সোহেল দ্বিতীয় মেয়াদে প্যানেল মেয়র ছিলেন। হরিপদ সাহা নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. দুজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান মহিউদ্দিন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোহেলের শরীরে ১০টি গুলি লেগেছে। তার মাথায় দুটি, বুকে দুটি ও পেটে চারটি গুলি লাগে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্ষোভ থেকেই কাউন্সিলরকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এ কারণেই এতগুলো গুলি চালানো হয়েছে। ঘটনার পিছনে কে ছিল তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়। তবে বালু ব্যবসা, চুক্তি ও আধিপত্য বিস্তারের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, দুইজনের মৃত্যুর পর এলাকায় পুলিশ-র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
সোহেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেলে কাউন্সিলর কার্যালয়ের আশপাশে শত শত মানুষ জড়ো হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে পাথরিয়াপাড়া সড়কে বিক্ষোভ করে তারা। বিক্ষোভকারীরা ওই এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালায়। পরে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।