হাটে ক্ষমতার দাপট, ইচ্ছামতো হাসিল

0

গত রোববার চট্টগ্রাম নগরীর নূরনগর হাউজিং এস্টেটের পশুর হাট থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় একটি গরু কেনেন আশফাকুল আলম নামে এক ব্যবসায়ী। গরু কেনার সময় বাধা। ইজারাদার ওই গরুর জন্য সাড়ে সাত হাজার টাকা দাবি করেন। বিরোধের একপর্যায়ে সাড়ে ছয় হাজার টাকা আদায় করে হাট থেকে গরু বের করে দেন। এ অবস্থায়ও ইজারাদাররা বাড়তি রাজস্ব দিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটছে। সরকার নির্ধারিত রাজস্বের পরিমাণ গরুর দামের ৫ শতাংশ হলেও অনেক হাটে তা আদায় হয় সাত শতাংশ পর্যন্ত।

এদিকে কোরবানির পশুর হাটে ফলাফলের তালিকা টানা বাধ্যতামূলক। তবে প্রভাবশালী ইজারাদাররা অনেক বাজারে তা টানার প্রয়োজন বোধ করেন না। দেশের বিভিন্ন এলাকার বেশির ভাগ হাটই ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ইজারা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে এ অনিয়মের প্রতি স্থানীয় প্রশাসন চোখ বুজেছে। এ সুযোগে ইজারাদাররা ইচ্ছেমতো তৈরি করছে। এতে কোরবানির পশু কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন মানুষ। এমনকি, বিক্রেতাদের কাছ থেকে রাজস্ব নেওয়া হচ্ছে, অথচ বিক্রেতাদের রাজস্ব দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। অতিরিক্ত রাজস্বের প্রেক্ষাপটে কোরবানী পশুর হাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানোর কথা ভাবছে স্থানীয় প্রশাসন।

বগুড়ার অন্যতম হাট মহাস্থান। মহাস্থান হাটে গরু কিনতে আসা ক্রেতারা জানান, এই হাটে চলছে সন্ত্রাস। সেখানে গরু প্রতি নির্ধারিত ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ছাগলের জন্য ১৫০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া এবারই প্রথম হাসিলের আওতায় এসেছেন বিক্রেতারা। তাদের দিতে হয় গড়ে ৩শ থেকে ৫শ টাকা।

বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুরের শ্যালক শফিকুল ইসলাম মহাস্থানহাটের ইজারাদার। বগুড়ার বড় বাজারগুলোর মধ্যে রনবাঘা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন সদর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রাজ, ডাকুমারা বাজারে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান শান্ত, জামুরহাটে যুবলীগ নেতা মতিন সরকার, সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নমুজা বাজারে চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক। আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব আলম, থাপেরহাটে যুবলীগ নেতা মতিন সরকারের সহযোগী ময়না, কালীতলা হাট পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশার ছোট ভাই, বনানী হাটে বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ মিঠু, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাজাহান খান প্রমুখ। কিচখাত ও গারিদহ হাট নিয়ন্ত্রণ চৌধুরী মো. টুটুল হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মো.

মহাস্থান বাজারের ইজারাদার শফিকুল ইসলাম জানান, বাজারটি সুষ্ঠুভাবে চালাতে বেশ কয়েকজনকে নিয়োগ দিতে হয়েছে। এ ছাড়া হাটের বার্ষিক ডাকে টাকার পরিমাণও বেড়েছে।

বেশ কয়েকজন ক্রেতা জানান, ইজারাদার প্রতিটি বাজারে রাজস্ব আদায়ের জন্য কর্মী নিয়োগ করেছেন। তারা দুই থেকে তিনবার জোর করে নিয়ে যাচ্ছে।

বগুড়া শহরের উপগ্রাম ও কালিতলা বাজারের ক্রেতারা জানান, প্রতিকেজি তারা পাচ্ছেন ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। ইজারাদারের পক্ষ থেকে প্রদত্ত স্লিপে শুধু গরুর দাম লেখা থাকে। ফলাফল লেখা হয় না. কোনো গ্রাহক এই রশিদ নিতে না চাইলে তাকে হুমকি দিয়ে বাজার থেকে বের করে দেওয়া হয়।

বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, জেলায় কেউ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের অভিযোগ করেননি। আমি এ ব্যাপারে সতর্ক আছি। প্রয়োজনে যেকোনো বাজারে অতিরিক্ত ফসল তোলা বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি হাটের ইজারাদারের নাম আব্দুল হাকিম হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুল ইসলাম। এখানে সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে অনেক বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। সদরের অন্য কুঁড়েঘর নিয়ন্ত্রণ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান। সহযোগীদের নিয়ে বাজার চালিয়ে বেশি টাকা আদায় করছেন। একই অবস্থা গাইবান্ধার দরিয়াপুর ও মহিমাগঞ্জ হাটে। এ বাজারে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের অভিযোগে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ইজারাদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।

রংপুর নগরীর অন্যতম পশুর হাট বুড়িরহাট। সেখানে ঈদের আগে শেষ বাজার ছিল গতকাল সোমবার। হাটে আসা পাইকার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্রেতার পাশাপাশি বিক্রেতাদের কাছ থেকেও বাড়তি রাজস্ব নেওয়া হচ্ছে। তবে, বিক্রেতাদের জন্য থাম্বের কোন নিয়ম নেই।

হাটে গরু কিনতে নওগাঁ থেকে আসা পাইকার মোহাম্মদ আলী জানান, একটি গরু কিনতে ইজারাদারকে দিতে হয় এক হাজার টাকা। যার কাছ থেকে গরু কিনেছি তাকেও ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। অর্থাৎ একটি গরুর জন্য ক্রেতা-বিক্রেতাদের দিতে হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *