চিনির বাজারের মধ্যস্বত্বভোগী

0

আবারও অস্থির হয়ে উঠছে চিনির বাজার। ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে চিনির দাম মণপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকরা সরবরাহ কম করায় পণ্যের দাম বাড়ছে। মিল মালিকরা বলছেন, তারা পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছেন।

এসও হোল্ডারদের (সাপ্লাই অর্ডার) দালালদের কারসাজি বাজারের অস্থিরতার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা মিল মালিক এবং পাইকারদের মধ্যে ‘মধ্যস্থতাকারী’ হিসাবে কাজ করে। শনিবার খাতুনগঞ্জ সফর করেন প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন। এ সময় তিনি মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজির প্রমাণও পান।

খাতুনগঞ্জ ও ঢাকার মৌলভীবাজারে চার শতাধিক অজ্ঞাতনামা দালাল রয়েছে। তাদের কাছে অন্তত ১ লাখ টন পণ্যের এসও রয়েছে। একটি মহল এসব এসও দিয়ে সময় নষ্ট করছে। অন্য একটি দলও বাজার থেকে অদলবদল করে মুনাফা নিচ্ছে। তবে এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মন্ত্রণালয় ডিও (ডিমান্ড অর্ডার) পদ্ধতি বাতিল করে এসও সিস্টেম চালু করে। গত সপ্তাহের শুরুতে প্রতি মণ চিনির দাম ছিল চার হাজার ৪০০ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। এখন ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার ৭৫০ টাকা।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের এসও কারসাজির কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসকের কাছে লেখা চিঠিতে দক্ষিণ কাট্টলী সার্কেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও এসও ম্যানিপুলেশনের নমুনা তুলে ধরেন। উমর ফারুক। বেনামে এসও কিনে তেল ও চিনির বাজার কে নিয়ন্ত্রণ করছে তার বিস্তারিত বিবরণ চিঠিতে রয়েছে। মাঠপর্যায়ের চিত্র দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন। মিল মালিক ও পাইকারদের যোগসাজশে এসও হোল্ডাররা কারসাজি করছে।

জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পাইকারি বিক্রেতা ও মিল মালিকদের প্রশ্রয় না দিলে মধ্যস্বত্বভোগীরা পণ্যের দাম বাড়ানোর সাহস পাবে না। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এসও কারসাজির প্রমাণ পেয়েছেন। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কারসাজির প্রমাণ পেয়েছেন।উমর ফারুক বলেন, “চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অনেকে বেনামে এসও কিনে বিনিময় করে।” সময় নষ্ট করে পাইকার ও মিল মালিক একে অপরকে দোষারোপ করলেও সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি সৃষ্টিতে উভয়েই ষড়যন্ত্র করছে। খাতুনগঞ্জ ট্রেড এবং শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছায়েদ ছগীর আহমদ কারখানা থেকে চিনির সরবরাহ বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

মিল মালিকরা পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আসার আগেই দালালদের কাছে চিনির এসও বিক্রি করে। এই এসওর ভিত্তিতে দালালরা মিল থেকে পণ্য এনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে বিক্রি করে। SO হোল্ডাররা মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে লাভবান হয়। এসওর নামে সে পণ্য নিতে বাধ্য, কিন্তু দালালরা বাজার বুঝে এসও পরিবর্তন করে। এভাবে হাত পাল্টানোর কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। একটি SO কারখানায় যাওয়ার আগে পাঁচ থেকে ১০ হাত ঘোরাতে পারে। প্রতিবার হাত বদলানোর সময় দাম বেড়ে যাওয়ায় SO-গুলিকে আরও ব্যাপকভাবে কারসাজি করা হয়। মিল মালিক ও পাইকাররা বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

যারা বাজারের ঝামেলা করছে

সিটি গ্রুপ, মেঘনা, দেশবন্ধুসহ বিভিন্ন গ্রুপ চট্টগ্রামে ট্রেডিং কর্পোরেশন ও এজেন্টের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করে। খাতুনগঞ্জের আহাদ গ্রুপ, সালাম গ্রুপ, জাহানার এন্টারপ্রাইজ, টিকে গ্রুপ, নাবিলা এন্টারপ্রাইজ থেকে এসও সহ শতাধিক ব্যক্তির তালিকা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঢাকায় এ ধরনের বড় মাপের এসওর সঙ্গে দুই শতাধিক দালাল রয়েছে। SO তে পণ্য সরবরাহের সম্ভাব্য তারিখ এবং ট্রাকের সংখ্যা রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ দালাল ওই তারিখে পণ্য ডেলিভারি নেয় না। এছাড়াও মিল মালিকরা সেই তারিখ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করেন না। বাজারে অস্থিরতা তৈরিতে এটি একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। জেলা প্রশাসন কর্তৃক এসও হোল্ডার দালাল হিসাবে নামকরণ করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- আল মদিনা ট্রেডার্স, মেসার্স ফরিদপুর বানিজলয়, মেসার্স বিএন ট্রেডিং, জয় এন্টারপ্রাইজ, মদিনা ট্রেডিং, পিটু ব্রোকার, ওএম এন্টারপ্রাইজ, মোবারক ট্রেডিং, শাহ আলম। , মেসার্স চিন ওসাকার, এসবি চৌধুরী। , মেসার্স আরএফ ট্রেডিং, বি জেনিয়া মাসুম, ডুইন কোং, আরএফ ট্রেডিং ইত্যাদি।

ব্যক্তির নামেও এসও কাটা হচ্ছে

পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোম্পানির নাম থাকা স্বাভাবিক হলেও ব্যক্তির নামেও দেওয়া হয়। এতে করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হয় প্রশাসনকে। যদি মোবাইল নম্বর সঠিক না হয়, তবে ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাও খুব সীমিত। কিন্তু ব্যক্তির নামও SO বিক্রিতে প্রচুর ব্যবহৃত হয়। এরকম কিছু নাম হলো- মোঃ সোহেল, রিজভী আহমেদ, সুদীব সরকার, ইমন দে, হারুনুর রশীদ, মিজান, অমিত কুমার ঘোষ, দীপু রায়, গৌতম, পার্থ রায়, জনি শাহ, এল.।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *