নির্বাচনকালীন প্রশাসনকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ।সচিবালয়ে শীর্ষ চার কর্মকর্তার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক

0

সরকার নির্বাচনমুখী প্রশাসন সাজাতে পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এমন ধারণা নিয়েই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। আগামী দিনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়। সংশ্লিষ্ট শীর্ষ দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বিরোধী দল প্রশাসনের ওপর ভিত্তি করে কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করছে- এমন কথাবার্তা ঘুরছে সচিবালয়ে। তাদের মধ্যে কানাঘুষা চলছে। এমন অবস্থা দেখে সরকারও কর্মকর্তাদের মনোবল বাড়ানোর উপায় খুঁজছে। বর্তমান সরকারের আমলে বারবার পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা যেন নির্বাচনের মুখে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার।

গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কক্ষে প্রশাসনের চার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মনোবল দৃঢ় রাখা এবং যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সচিবালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার এক সদস্যের কক্ষে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক হয়। এ সময় মন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে মুখ্যসচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও জননিরাপত্তা সচিব মন্ত্রীর কক্ষে যান। বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীর চাপে ছিলেন মন্ত্রী। এই চাপ সামলানোর পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর তারা অন্তত তিন ঘণ্টা একান্ত বৈঠক করেন বলে জানা গেছে।

বৈঠকের টেবিলে বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা ছিল। এর মধ্যে কয়েকটি সংবাদপত্র একে অপরের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর চূড়ান্ত আন্দোলনের কিছু খবর তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে চায় সরকার। সরকার দেশি-বিদেশি ফোরামে এমন আশ্বাস দিলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তা মানছে না। তাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে সমঝোতা না হলে যেকোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এমন পরিস্থিতি অনুমান করে মধ্য ও উচ্চ পর্যায়ে দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এ কারণে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনে আরও অন্তত তিনজনকে পদোন্নতি দেওয়া হবে। প্রশাসনের ২২ ব্যাচের কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এ বিষয়ে কাজ অর্ধেক এগিয়েছে। ব্যতিক্রম না হলে জুলাই মাসের মধ্যে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে।

এরপর পদোন্নতির জন্য লাইনে আসবে প্রশাসনের ২৯তম ব্যাচ। এই ব্যাচের সিনিয়র সহকারী সচিবরা ইতিমধ্যেই উপসচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। পদোন্নতির জন্য যোগ্যদের তথ্য চেয়ে জনপ্রশাসন থেকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে চলতি বছরে একবার অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেলেও নির্বাচনের আগে তাকে আবারও পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। ১৮তম ব্যাচের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। চলতি বছরে অতিরিক্ত সচিবের পদোন্নতির কারণে এই পদোন্নতি যথারীতি বিবেচনায় নেওয়ার কথা নয়। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে দক্ষ কর্মকর্তাদের রিজার্ভ বাড়াতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

গত মে মাসে ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লেগেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দেরিতে পদোন্নতি পেলেও গতবারের চেয়ে এবার আরও বেশি কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। কেউ কেউ মনে করেন এটা নির্বাচনী পুরস্কারও বটে। মূল ব্যাচের অর্থাৎ ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা এর আগে একাধিকবার পদোন্নতির জন্য যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও শতাধিক অতিরিক্ত সচিবকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। প্রয়োজনে একই ব্যাচ ভেঙে দুই বছরে দুবার পদোন্নতি হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির সময় মূল ব্যাচের যোগ্য কর্মকর্তা ছিলেন মাত্র ৪৯ জন। এর মধ্যে ৪২ জনসহ ১১৪ জনকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রশাসনে যোগদানকারী ইকোনমিক ক্যাডার কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ব্যাচের লেফট আউট কর্মকর্তারা রয়েছেন। কিন্তু অতিরিক্ত সচিব পদে ১০০ জনেরও বেশি পদোন্নতি হবে- এটা প্রায় কেউই আঁচ করতে পারেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *