সাংবাদিক নাদিম হত্যা : ইউপি চেয়ারম্যান বাবু আ. লীগ থেকে বহিষ্কার
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে তাকে বহিষ্কারের চিঠি দেন বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন তালুকদার বাবুল। এদিকে পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ জানান, পলাতক বাবু চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারে এলআইসিসহ পুলিশের ৫টি টিম মাঠে কাজ করছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সাংবাদিক নাদিমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, বকশীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নির্দেশে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে হত্যা করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ইতিমধ্যেই ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযানের সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ধরতে এলআইসিসহ পুলিশের ৫টি দল মাঠে কাজ করছে। চেয়ারম্যান বাবুকে দুই দিনের মধ্যে গ্রেফতার করা যাবে।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ বা মামলা করা হয়নি।
জানা যায়, সাংবাদিক নাদিম বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবুর অপকর্মের একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেন। চেয়ারম্যান বাবু ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিক নাদিমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। গত বুধবার ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেয়। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন নাদিম। কয়েক ঘণ্টা পর অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন নাদিম। হামলায় নেতৃত্ব দেন ইউপি চেয়ারম্যান বাবু ও তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক আল মোজাহিদ বাবু জানান, নাদিমকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ছুড়ে মারা হয়। এরপর চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর ছেলে রিফাত ও তার বাহিনী তাকে টেনেহিঁচড়ে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় চেয়ারম্যান বাবু রাস্তার মধ্যে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
পরে স্থানীয়রা সেখান থেকে নাদিমকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে রাতে তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিনই তার মৃত্যু হয়।
শুক্রবার শোক ও শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে সাংবাদিক নাদিমকে বিদায় জানানো হয়। সকাল ১০টায় বকশীগঞ্জ নূর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাজা এবং দুপুর ১২টায় নীলক্ষিয়া ঈদগাঁও মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাদা-দাদির কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
এদিকে নাদিমের খুনিদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল দেশের সাংবাদিক সমাজ। জামালপুর প্রেসক্লাব ও বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাব ৩ দিনের শোক পালন করছে।
নিহত গোলাম রব্বানী নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, বাবু চেয়ারম্যান আমার স্বামীর খুনি। আমি আমার স্বামীর খুনিদের ফাঁসি চাই।
বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম শাহীন আল আমিন জানান, পুলিশ সুপার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে সকল আসামীকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। তবে বাবু চেয়ারম্যানসহ সকল আসামি গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমরা সাংবাদিকরা মাঠে রয়েছি।