ঘূর্ণিঝড় মোকার এক মাস পর।সেন্টমার্টিন শাহপরীর দ্বীপ এখনো ঘুরেনি
এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান ফাতেমা খাতুন। স্বামী মোহাম্মদ আলমের রেখে যাওয়া ঋণের বোঝা মাথায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তিনি মারা যাওয়ার পর পরিবারের ভার বহন করতে হয় ফাতেমাকে। ১৪ মে ঘূর্ণিঝড় মোকা একমাত্র আশ্রয়স্থল খুপরি ঘর ধ্বংস করে। এক মাস পার হলেও বাড়িটি সংস্কার করা যায়নি। ফাতেমা কোনো সরকারি সাহায্য পাননি। এ অবস্থায় চার সন্তান নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
টেকনাফের শাহপরী দ্বীপের উত্তরাঞ্চলে এ চিত্র দেখা গেছে। ঘূর্ণিঝড় মওকা টেকনাফের সেন্টমার্টিন ও শাহপরী দ্বীপে বহু গাছপালা ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন ফাতেমাসহ অনেকে।
নাফ নদীর তীরে শাহপরী দ্বীপে কথা হয় ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে। ভাঙা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর ঋণের ভারে কঠিন জীবনযাপন করছেন তিনি। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এখন পাশের বাড়িতে কোনোরকমে দিন কাটছে।
প্রতিবেশী আবুল হোসেন তার জরাজীর্ণ বাড়ির সামনে শেডবিহীন দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি জানান, টাকার অভাবে বাড়ি যেতে পারছেন না। একই এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে স্থায়ী হয়েছে সে। দিনমজুরি করে সংসার চালাতে হয়। এ অবস্থায় বাড়ি মেরামত তো দূরের কথা, খাওয়া-দাওয়ার খরচও মেটানো যাচ্ছে না।
শুধু আবুল হোসেন, ফাতেমাই নন, মওকা আক্রান্ত শাহপরী দ্বীপের শতাধিক পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। সরকারি-বেসরকারি কোনো ধরনের সহায়তা তারা পাননি বলে অভিযোগ।
উপজেলা প্রশাসন বলছে, মওকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ। এ দুই দ্বীপে দেড় হাজারের বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি দুই হাজার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে নগদ ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৮৩০ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী, ৪০০ গৃহহীন পরিবারকে ৮০৩ বান্ডিল তুলা এবং ৬ হাজার ৮৭০ পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।
প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের পশ্চিমাঞ্চল মওকার আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দা জেসমিন আক্তার জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তার ঘর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখনও কোথাও থিতু হয়নি। কয়েকদিন আগে তালিকা করে ছবি তুলেছেন। তার কপালে শুকনো খাবার ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
সেন্ট মার্টিনের জেলে মোহাম্মদ আমিন জানান, তার বাড়ি ভাংচুর করা হলেও শুকনো খাবার ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। অনেকে অনুদান পেয়েছেন। কিন্তু এখনও অনেক পরিবার আছে, যাদের মাথা থিতু হয়নি।
সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের প্রায় ৭০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি ফিরেছে। কিছু লোক এখনও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি হারানো অধিকাংশ মানুষ ঘরে ফিরেছে। আমরা পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করছি।