টাঙ্গাইল।ঠিকাদারের কাজ বেচাকেনা,সেতু নির্মাণ অনিশ্চিত
কালিহাতী উপজেলার জোকারচরে একটি সেতুর নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারের অবহেলা ও প্রতারণার কারণে বন্ধ রয়েছে। এলজিইডির তদারকির অভাবে গত তিন বছরে মাত্র কয়েকটি পিলার স্থাপন করা হয়েছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ধলেশ্বরী নদীর পাড়ের কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার পশ্চিমে মাহমুদ নগর গোল চত্বর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত শেখ হাসিনা সড়ক। এই সড়কটিকে বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কের সঙ্গে যুক্ত করতে ধলেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতু প্রয়োজন। এ কারণে জোকারচরে ৩৪ কোটি ১৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৬৪ মিটার পিএসসি গার্ডার সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডি। হায়দার কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড, অবনী এন্টারপ্রাইজ এবং সৈয়দ মজিবুর রহমান জেভি যৌথভাবে সেতু নির্মাণের কাজ পায় তিন ঠিকাদার। ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে আদেশটি জারি করা হয়েছিল। চুক্তি অনুসারে, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অংশীদারদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির কারণে দেড় বছর পরেও তারা তা করেনি। কাজ শুরু করবেন না। কাজ শেষ হতে আর মাত্র চার মাস বাকি। এখনও ৮০ শতাংশ কাজ বাকি।
ঠিকাদারি কাজের অংশীদার সৈয়দ মজিবুর রহমান বলেন, হেকমত ও হায়দার নামে দুই অংশীদার আমাকে স্ট্যাম্পে কাজ করবে না লিখে সেতু নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছিল। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে সেখানে ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করি। হঠাৎ সহযোগী হেকমত সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে আমার কাজ বন্ধ করে দেয়।সে একাই সেতু নির্মাণ করবে বলে আমার সাথে প্রতারণা করেছে।আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।এসব ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।আমি টাকা ফেরত চেয়ে ইতিমধ্যে প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছে।
অবনী এন্টারপ্রাইজের মালিক হেকমত আলী অন্য দুই ঠিকাদার হায়দার ও সৈয়দ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে গাজীপুরের ঠিকাদার রফিকুল ইসলামের কাছে কাজ বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রফিকুল ইসলাম জানায়, হেকমত আলী তাকে প্রতারণা করেছে। পাইলিংসহ ওই সেতু নির্মাণের জন্য তিনি হেকমতকে ২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা দেন। জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি জানতে পেরে তিনি নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। এখন টাকা ফেরত পেতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি।
জোকারচর গ্রামের ইউনুস শেখ জানান, সেতুটি নির্মিত হলে টাঙ্গাইলের চর এলাকার মানুষ শেখ হাসিনা সড়ক দিয়ে সহজেই উত্তরাঞ্চলে যেতে পারবে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের বিকল্প রুট করা হবে। ঈদে মহাসড়কে কোনো যানজট থাকবে না। বিকল্প পথে এলেঙ্গা যেতে পারেন। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার হেকমত আলী মন্তব্য করেন, সৈয়দ মজিবুর রহমান নির্মাণ কাজের দায়িত্ব নিয়ে সময়মতো কাজ করেননি। এ কারণে তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। তিনি বিনিয়োগের টাকা তুলে নিয়েছেন। পরে কাজটি গাজীপুরের ঠিকাদার রফিকুল ইসলামের কাছে বিক্রি করা হয়। তিনি যত কাজ করেছেন, তার টাকা এলজিইডি থেকে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ করলেও মালিকরা টাকা পাননি। এ কারণে তাদের সঙ্গে সমস্যা হচ্ছে। সেতুর ১২টি পাইলিং বাকি রয়েছে। নদীতে পানি প্রবেশ করায় কাজ বন্ধ রয়েছে।
টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, একদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেশি, অন্যদিকে অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এসব বিষয় তাদের চিন্তায় ফেলেছে। সব পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করেছে ঠিকাদার। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।