পেঁয়াজের দাম কমাতে ‘টনিক’

0

পেঁয়াজের দাম শতক ছুঁয়ে যাওয়ার পর ভোক্তাদের মনে যে উদ্বেগ ছড়িয়েছিল, সোমবার তা অনেকটা কেটে গেছে। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানায়, মাত্র একদিনে পাইকারি বাজারে কেজিতে ৩০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা দাম কমেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের অনেক বড় ব্যবসায়ী দাম ছাড় দিয়ে হুট করে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। সোমবার ঢাকার কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজারে পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ৫৫ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। রোববার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার সরকারের ঘোষণা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই বিস্ময়কর উন্নয়নের পিছনে একটি টনিক হিসাবে কাজ করে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানানোর সাহসও আমাদের নেই।

Description of image

তবে এই ধন্যবাদের পাশাপাশি আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কেও কিছু বলতে চাই। অর্থাৎ গত রোজার ঈদের পরপরই আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত, যাকে আমরা কিতাব ভাষায় ঈদ-উল-ফিতর বলি, যখন পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকায় পৌঁছেছিল। তাহলে একদিকে মজুতদাররা সাধারণ ভোক্তাদের পকেট কাটার সুযোগ কম পাবে; ভোক্তারাও অনেক আগেই জীবনযাত্রার সীমাহীন খরচের এই সময়ে কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পেয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি মুষ্টিমেয় মজুদদারদের সুবিধার্থে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে বিলম্ব করেছে?

উল্লেখযোগ্যভাবে, পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হওয়ার পর থেকে, বিশেষ করে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে – মজুদ রয়েছে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ, সরবরাহ ঘাটতির কোনো কারণ নেই। আমরা কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান থেকে আরও জানতাম যে এই বছর উৎপাদন – ২-৫ লক্ষ টন চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৩.৫লক্ষ টন – গ্রিনহাউসের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকা উচিত। কিন্তু দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় ফেব্রুয়ারী-মার্চে যে পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে থাকে, তা কি অন্ততপক্ষে ক্ষুদ্র-মাঝারি কৃষকের ঘরে ততদিন থাকতে পারে? কিন্তু মৌসুমী ফসল বিক্রি করা ছাড়া তাদের সংসার চালানোর আর কোনো উপায় নেই। ফলে পেঁয়াজের বাজার চোরাচালানকারীদের দখলে চলে যাওয়ার কথা। এবং তাই ঘটেছে; যার কারণে ধীরে ধীরে তাদের মজুদ রেখে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে; এখন আমদানির কথা শুনে মজুদকৃত পেঁয়াজ লোকসানের আশঙ্কায় তাড়াহুড়ো করে বিক্রি করা হচ্ছে। এখানে এটা পরিষ্কার যে, কৃষকদের লাভের সুযোগ দেওয়ার অজুহাতে সরকার পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করলেও প্রকৃতপক্ষে কৃষকরা লাভবান হয়েছে।

বলাই বাহুল্য, ভারতে এখন পেঁয়াজের দাম খুবই কম। সে হিসেবে খুচরা পর্যায়ে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম দু-একদিনের মধ্যে আরও কমবে।

সর্বশেষ, পেঁয়াজ খাতে সরকার প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে; অন্যান্য অনেক দৈনন্দিন পণ্যের জন্যও অনুরূপ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানিতে সরকার চাইলে বিদ্যমান মুষ্টির বাইরে আরও কোম্পানিকে উৎসাহিত করতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে পণ্যের দাম কম থাকলেও দেশের বাজারে বেশ চড়া; সরকার সেক্টরে স্বৈরাচারের পক্ষপাতী হওয়ার কারণে এটি হতে পারে।

দেশে চলছে মুক্তবাজার অর্থনীতি; মুক্তবাজারের নিয়মানুযায়ী এখানকার বাজারে সবাইকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া জরুরি। এটি বাজারে যেমন সুস্থ প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনবে, তেমনি ভোক্তারাও স্বস্তি পাবেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।