আলোচনায় সাকিব ফেরদৌস পরশ ও জসিমের নাম।ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কে পাচ্ছেন?
উপনির্বাচনের বিস্তারিত ঘোষণা না হলেও ঢাকা-১৭ আসনে বইছে ভোটের হাওয়া। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা আকবর হোসেন খান পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে শূন্য আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন অনেকে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দলের নীতিনির্ধারণী নেতাদের কাছে জোর লবিং করছেন কেউ কেউ। দু-একজন পোস্টার ছাপিয়ে আগাম প্রার্থীতা ঘোষণাও শুরু করেছেন।
তবে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। তাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। শাকিব ছাড়াও বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীর নাম আলোচনায় রয়েছে। বিনোদন জগতের দু-একজনও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ফারুক গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সংসদ সচিবালয় ১৮ মে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। কোনো সংসদীয় আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। তবে কবে নাগাদ তফসিল ঘোষণা করা হবে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি নির্বাচন কমিশন।
ঢাকা-১৭ নির্বাচনী এলাকা গুলশান, বনানী, ঢাকা সেনানিবাস এবং ভাসানটেকের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এসব থানার মধ্যে ১৫, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড পড়েছে এ আসনটিতে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এলাকাগুলো ঢাকা-৫ আসনের অধীনে ছিল।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ (মৃত) ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হলেও নানা নাটকীয়তার পর শেষ মুহূর্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন তিনি। পরে এ আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে সংসদ সদস্য হন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এসএম আবুল কালাম আজাদ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অনেক দলীয় নেতা ও হেভিওয়েট প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও ফারুককে বেছে নেয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত করেনি ক্ষমতাসীন দল। নির্বাচন কমিশন তালিকা ঘোষণার পর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে দলটি। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকায় এ উপনির্বাচন নিয়ে খুব একটা ভাবনা নেই দলটির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। এর পরও নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে বহুমুখী আলোচনা।
এই আলোচনায় উঠে আসছে সাকিব আল হাসানের নাম। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মাগুরা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন সাকিব। তবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সাকিবকে রাজনীতিতে না এসে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলায় মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সেবার সাকিব মনোনয়ন না পেলেও নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
ঢাকা-১৭ আসনে সাকিবের প্রার্থিতা সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। তবে সাকিবের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, ইনজুরির কারণে বর্তমানে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা সাকিব আল হাসান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। দল থেকে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে উপনির্বাচনে লড়বেন তিনি। শাকিব ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর উত্তরের
আওয়ামী লীগের দুই সহ-সভাপতি আবদুল কাদের খান ও ওয়াকিল উদ্দিনের নাম শোনা যাচ্ছে। এর আগেও বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তারা। কারও কারও মতে, উপনির্বাচনে চমক হিসেবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকেও মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ মনোনয়ন পেতে পারেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিনের নামও আলোচনায় রয়েছে।
অভিনেতা ফারুকের মৃত্যুতে শূন্য ঘোষিত এ আসনে বিনোদন জগতের কেউ প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ। চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদকে নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। গত জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও আওয়ামী লীগের হয়ে বেশ কিছু নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন ফেরদৌস। দলীয় কর্মকাণ্ডেও তিনি বেশ সক্রিয়।
এ ছাড়া এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ও নাট্যকর্মী-অভিনেতা-নির্মাতা সিদ্দিকুর রহমান। ইতিমধ্যে এলাকায় পোস্টার লাগিয়ে তিনি প্রকাশ্যে তার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। পোস্টারে তিনি নিজেকে ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী উল্লেখ করে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলের কয়েকজনের নাম আলোচনায় থাকলেও তারা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।