তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ ভবন।এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বের কারণে দরপত্র বাতিল

0

টেন্ডারের পর ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ভবন নির্মাণের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য তবে এক বছর পর তার অনুরোধে টেন্ডার বাতিল করা হয়। এতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুলের সঙ্গে বিরোধের জেরে সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর-ধর্মপাশা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘ভবন তৈরি করতে ৫৫টি গাছ কাটতে হয়। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে এমন কাজ করতে দেওয়া যাবে না। এজন্য পকেটের টাকা দিয়ে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের জন্য জমি কিনেছি। দলিল সম্পন্ন হয়. এর বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না।

তবে উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু বলেন, ‘যিনি ভবনটি উদ্বোধন করেছেন তিনি ডিও লেটার দিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করায় আমি মর্মাহত। তাহিরপুরবাসীকে বঞ্চিত করা হয়েছে, এটা উন্নয়নবিরোধী সিদ্ধান্ত। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করব। তার আগ্রহের কারণে তিনি (এমপি) হাওরে ভবন নির্মাণের কথা বলছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কাজ বন্ধ করতে সংসদ সদস্য পরিবেশ কর্মীদের ডেকে বার বার তাহিরপুর সদরে কর্মসূচি দিতে বলেন। পরিবেশবাদীরা আমাকে বলেছে।

দরপত্রের তথ্য অনুযায়ী, সব প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ২ মার্চ তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ভোলার চরফ্যাশনের সাইমুম ট্রেডার্সকে। তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবির স্বাক্ষরিত কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজটি ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। টাস্ক অর্ডারের পর ২০২১ সালের ২ অক্টোবর উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন স্থানীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন। এ সময় সাবেক এমপি অপু উকিল, উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক অমল কর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

১ জানুয়ারী, ২০২২ তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সামছুল হক একটি পৃথক চিঠিতে নির্মাণস্থলের ৫৫টি গাছ কাটা, পরিষদের দুটি পুরানো টিনশেড ভবন এবং একটি টিনশেড অডিটোরিয়াম ভেঙে ফেলার অনুমতি দেন। এরপর উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কিছু কাজ করা হয়। এদিকে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ভবনটির স্থান পুনঃনির্ধারণে একটি ডিও লেটার দেন এমপি। এতে তিনি পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে পার্শ্ববর্তী হাওরের ৩ দশমিক ৪৪ একর জমিতে ভবনটি স্থানান্তরের অনুরোধ জানান। এই ডিও লেটারের পর ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

গত ৩০ মে স্থানীয় সংসদ সদস্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সামছুল হক সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসককে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর বিষয়টি জানাজানি হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুচ ছোবহান আখঞ্জী বলেন, পাটা-পুটায় মরিচ ঘষার কাজ শেষ- এতে আমরা পড়ে গেছি। চেয়ারম্যান ভবনের জন্য তহবিল এনেছিলেন, তাতে বাধা দেন সাংসদ। কিন্তু আমরা ভবন চাই। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান এমপিকে বাইপাস করে তহবিল নিয়ে আসায় তিনি হতাশ।তাছাড়া করুণা সিন্ধু এ আসনে আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন ব্যানারসহ। এতে এমপির সঙ্গে তার দূরত্বও বেড়ে যায়।

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, স্থানীয় সংসদ সদস্য মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দেওয়ার পরই দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। বদলি হওয়ার পর আমি একজন নতুন আগত হওয়ায় বিস্তারিত বলতে পারছি না।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি করুণা সিন্ধুর বিরোধিতা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। করুণা সিন্ধু নিজেই বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন, তিনি আনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক অমল করের মাধ্যমে এর বিরোধিতা করেছেন। এরপর থেকেই ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন এমপির সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক করুণা সিন্ধুর বিরোধ চলছে।

তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খান বলেন, ‘এমপির ভবন অবরোধ করার কোনো ইচ্ছা নেই। থাকলে তিনি পকেটের টাকা দিয়ে হাওয়ারে জমি কিনতেন না। ওই জমিতে ভবন নির্মাণ হবে বলে আশা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *