‘গুলবাহার’ চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শো-মনের বাগানে ফুটিল ফুল রে

0

সত্তরের দশকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত সাহিত্যিক আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘কর্ণফুলী’ নামের একটি নাটকের সন্ধান পাই আমরা। এরপর আসে চাটগাঁইয়া গানের কিংবদন্তী আবদুল গফুর হালী এবং এম এন আখতারের নাম। তারা দুজনই আঞ্চলিক নাটকের পথিকৃৎ রচয়িতা। আবদুল গফুর হালী ১৯৭৪ সালে রচনা করেন ‘গুলবাহার’। ১৯৭৬ সালের ২৮-৩০ অক্টোবর তিন দিনব্যাপী নাটকটি মঞ্চস্থ হয় চট্টগ্রাম মুসলিম হলে। নাটকের শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন পরবর্তীতে ‘বেদের মেয়ে জোছনা’-খ্যাত অঞ্জু ঘোষ ও পংকজ বৈদ্য সুজন। এই গীতিনাট্যে প্রায় দুই ডজন গান ছিল, গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন কালজয়ী শিল্পী শেফালী ঘোষ ও শ্যামুসন্দর বৈষষ্ণবসহ চট্টগ্রামের তখনকার খ্যাতিমান শিল্পীরা।
২০১৬ সালে আবদুল গফুর হালীর প্রয়াণের পর আবদুল গফুর হালী রিসার্চ সেন্টারের প্রযোজনায় ও পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ারুল হকের পৃষ্ঠপোষকতায় আঞ্চলিক নাটক ‘গুলবাহার’কে চলচ্চিত্রে রূপদানের উদ্যোগ নেয়া হয়। চলচ্চিত্র নির্মাণে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন আবদুল গফুর গফুর হালী রিসার্চ সেন্টারের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন। গত শুবার সন্ধ্যায় আলিয়ঁস ফ্রসেজ চট্টগ্রাম মিলনায়তনে হয়ে গেল আবদুল গফুর হালী রচিত ও পংকজ চৌধুরী রনি পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘গুলবাহার’ এর প্রিমিয়ার শো। কাণায় কাণায় পূর্ণ এই এই প্রদর্শনীতে দর্শকদের ঢল নেমেছিল।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের রানী হিসাবে খ্যাত শিল্পী কল্যাণী ঘোষ, ছবিটি দেখে তিনি অনেকটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন, বলেন-‘‘আসলে গফুরদা’র ‘গুলবাহার’ ছিলাম আমি। আমার সামনেই এই নাটক লেখা হয়েছে। এই নাটকের প্রতিটি কথা, প্রতিটি গানের সঙ্গে রয়েছে আমার স্মৃতি। জীবদ্দশায় গফুরদার খুব ইচ্ছে ছিল তার আঞ্চলিক নাটকগুলোকে নতুনভাবে নির্মাণ করে নতুন প্রজেন্মর কাছে তুলে ধরার জন্য। আঞ্চলিক নাটকটি নিয়ে চলচ্চিত্র হওয়ায় আমি দারুণ খুশি।’ তবে তিনি এও বলেন, ‘‘গুলবাহার মূলত একটি গীতিনাট্য, তাই সংলাপের চেয়ে গানই মুখ্য এই নাটকে। চলচ্চিত্রে আরও কিছু গান রাখা গেলে ভালো হতো, বিশেষ করে এই নাটকের প্রাণ ‘তুঁই যাইবা সোনাদিয়া বন্ধু’ গানটি শুনতে না পেয়ে আমি কিছুটা হতাশ হয়েছি।’’
আবদুল গফুর হালী রিসার্চ সেন্টারের সেক্রেটারি, সাংবাদিক নাসির উদ্দিন হায়দার বলেন, ‌‌’সত্তরের দশকের শেষদিকে কক্সবাজারে ‘গুলবাহার’ মঞ্চস্থ হয়েছিল। নাটকে নায়িকা অঞ্জু ঘোষ একটি কলাগাছ ধরে কেঁদেছিলেন। দর্শকদের কাড়াকাড়ির কারণে সেই কলাগাছ নিলামে উঠেছিল, বিক্রি হয়েছিল ১০০ টাকায়। তখন এমনই ছিল চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নাটকের জনপ্রিয়তা।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক সুবীর মাহজন বলেন, ‘আমি মনে করি, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সত্য সাহা-সঞ্জিত আচার্য্য জুটির ‘সাল্ফক্সানওয়ালা’র পর গফুর হালীর ‘গুলবাহার’ হবে নতুন মাইলফলক।’
‘গুলবাহার’ চলচ্চিত্রের চিত্রায়ন হয়েছে সাতকানিয়ার বাজালিয়ায়, শঙ্খ নদী ও আশেপাশের লোকালয়ে। এই চলচ্চিত্রের কাহিনী মূলত নদীতীরবর্তী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনচিত্র নিয়ে রচিত। সাম্পানমাঝি সোনা মিয়া ও শঙ্খ-কন্যা গুলবাহারের নিটোল প্রেম, গ্রাম্য মোড়লের শঠতা এবং সর্বোপরি সত্যের জয়, এই হলো ছবির কাহিনী এতে অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দিন খান, সত্যজিৎ ঘোষ, শেখ দীনা, আকবর রেজা, ইমরান রহমান, মোহাম্মদ সাইফুল, ঊমেসিং মারমা। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী সন্দীপন, নাবিলা, মহসিন ও নিপা। সংগীত পরিচালনায় কনক রাজভর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *