সংসদীয় কমিটিতে অভিযোগ।এলাকায় রাস্তা বেহাল গালি খাচ্ছেন এমপিরা
স্থানীয় সরকারি রাস্তার বেহাল দশার কারণে ভোটারদের অভিযোগ শুনতে হচ্ছে সংসদ সদস্যদের। যদিও এই ভাঙা রাস্তা মেরামতের কাজে সংসদ সদস্যরা জড়িত নন। এটি রক্ষণাবেক্ষণের একমাত্র ও একমাত্র দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হওয়ায় এসব ভাঙ্গা রাস্তার জবাব দিতে হচ্ছে সংসদ সদস্যদের। খারাপ রাস্তার কারণে এলাকায় যেতে বিব্রতবোধ করছেন কেউ কেউ।
সম্প্রতি এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খুলনার সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী, রংপুরের সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা ও বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহে আলম সড়কটি নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ মার্চ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। গত ৩ মে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আগের বৈঠকের আলোচনার কার্যবিবরণী অনুমোদন করা হয়। বর্তমানে দেশে এলজিইডির আওতায় মোট পাকা সড়কের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা সড়ক ১ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার। বাকিটা কাঁচা রাস্তা।
সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী গত অর্থবছরে মেরামত বা সংস্কার কাজের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে বলেন, উপজেলা সড়ক মেরামত বা সংস্কারের টাস্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। প্রথমে এবং পরে গ্রামীণ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হওয়ার পর নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যায় এবং কাজের গতি কমে যায়। বর্তমান বাজার অনুযায়ী নির্মাণসামগ্রীর দাম পুনর্নির্ধারণ করায় সেসব কাজ চলমান রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বৈঠকে বরিশাল-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শাহে আলম বলেন, এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে তাদের কটূক্তিসহ নানা কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। কিন্তু এ সড়ক নির্মাণ বা মেরামতের সঙ্গে সংসদ সদস্যরা জড়িত নয়। তিনি বলেন, তার নির্বাচনী এলাকা উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলার ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এবং অনেক সড়কের কাজ শুরু হলেও বন্ধ রয়েছে। এ কারণে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। বর্ষা শুরুর আগেই এসব সড়ক জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করার অনুরোধ জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, রাস্তার ক্ষতি রোধে প্রতি ইউনিয়নে ১০ জন করে নারী থাকলেও তারা ঠিকমতো কাজ করছেন না। তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।
রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, গ্রামীণ সড়কের বেহাল দশায় গণপরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে নির্বাচনী এলাকায় যেতে বিব্রতবোধ করছি। রাস্তার কাজের মূল্য পুনঃনির্ধারণ করা হলেও সংস্কার কাজ চলছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। এ সময় তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এসব সড়কের কাজ দ্রুত শেষ করার অনুরোধ জানান। এ ছাড়া তিনি গ্রামীণ সড়কের কাজ কবে শুরু হবে তা জানানো এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে এসব কাজের উদ্বোধন করার প্রস্তাব দেন। তিনি সড়কে খড় শুকানোর প্রবণতা বন্ধ, নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বিদ্যমান ড্রেনগুলো সংস্কারের অনুরোধ জানান।
খুলনা-৪ আসনের (দিঘলিয়া, রূপসা ও তেরখাদা) আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদীও গ্রামীণ সড়ক সংস্কারের ধীরগতির অভিযোগ করেছেন। তিনি সড়কের ধরন বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে এসব সড়কের কাজ শুরু করার প্রস্তাব করেন।
সংসদ সদস্যদের অভিযোগের জবাবে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বলেন, গ্রামীণ রাস্তা মেরামতে বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা লাগে। বিপরীতে বরাদ্দ মাত্র তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, নতুন হার নির্ধারণের পর স্থবির কাজ শুরু হয়েছে। পরে কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই সিলেটের আগের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কসহ দেশের সব সড়ক দ্রুত মেরামত করার পরামর্শ দেন।