বিএনপি চাপে, মোকাবিলায় হিমশিম
সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন করতে গিয়ে চাপে পড়েছে বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল দলটি। দাবি আদায়ে সরকারের ওপর ‘চাপ’ তৈরি করলেও এখন উল্টো বিপাকে পড়েছেন তারা। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দলের হাইকমান্ড কিছুটা অস্বস্তিতে। বিশেষ করে আসন্ন পাঁচ সিটি নির্বাচনে কেন্দ্র নেতাকর্মীদের ভোটে বাধা দিতে অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে।
আবারও দলটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের অন্যতম সমমনা জোট গণতন্ত্র ভাঙার জন্য অপ্রস্তুত। সরকারের সঙ্গে গোপন সখ্যতার কারণে গণঅধিকার পরিষদ জোট ত্যাগ করেছে বলে অভিযোগ বিএনপি ও মঞ্চের নেতাদের। এমনকি পর্দার আড়ালে নানা তৎপরতার কারণে আন্দোলনের ‘যৌথ রূপরেখা’ ঘোষণা করা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে সমমনা জোট ও দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেও ঐকমত্য হয়নি।
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় ‘সফল’ বিভাগীয় সমাবেশে বিঘ্ন ঘটানো এবং ভাঙাচোরা আন্দোলনকে নতুন করে চাঙ্গা করা দলের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতে একটি আন্দোলনমুখী ও কার্যকর শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলাই বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আন্দোলনকে সামনে রেখে ‘গায়েবি’ মামলায় গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা কৌশল নিলেও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল হিমশিম খাচ্ছে।
তবে সমমনাদের নিয়ে আন্দোলনের যৌথ রূপরেখা চলতি সপ্তাহে চূড়ান্ত ও ঘোষণা করা হতে পারে। একই সঙ্গে সোমবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বিএনপি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জোর করে কোনো স্বৈরশাসক ক্ষমতায় থাকতে পারে না। আওয়ামী লীগ যতই অত্যাচার ও কৌশল করুক এবং চাপে রাখুক না কেন- এবারেই শেষ হবে । এই স্বৈরাচারী সরকার দেশের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারকে ধ্বংস করেছে। এখন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা পরাজিত হবে জেনে সুষ্ঠু ভোট না দিয়ে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে চায়। এবার দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। অচিরেই রাজপথে গণজোয়ারের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে-ইনশাল্লাহ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড.শাহদীন মালিক গতকাল বলেন, আমাদের দেশকে বলা হয় স্বৈরাচারী গণতন্ত্রের দেশ। এ ধরনের দেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, মামলা-হামলা, সভা-সমাবেশে বাধা ও বিনা কারণে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দমন ও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। যতদিন এই প্রচেষ্টা সফল হয়, কর্তৃত্ববাদী সরকার টিকে থাকে। বিএনপির দুর্দশা মোটেও অপ্রত্যাশিত নয়। বিএনপির আন্দোলনের দুর্বলতা হলো, তারা জনগণের আর্থিক দুরবস্থা ও তার প্রতিকার করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সমমনা জোট ভাঙতে অপ্রস্তুত
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গণতন্ত্রের মঞ্চে যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম সমমনা জোট ভাঙার ঘটনায় অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে বিএনপি। ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ গণতন্ত্রের মঞ্চ ছেড়ে আন্দোলনে প্রভাব ফেলতে পারে। নেতৃত্ব ও সঠিক মূল্যায়নের কথা বলা হলেও গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপির নেতারাও পর্দার আড়ালে সরকারের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ করছেন। তবে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তবে দলটির সদস্য সচিব ভিপি নূর গতকাল গণতন্ত্র ফোরামের বৈঠকে যোগ দিয়ে জোট ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, তাদের দল রাজনৈতিকভাবে খুবই নতুন। দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা অর্জনে তাদের নতুন কর্মসূচিতে যেতে হবে। তারা পরবর্তীতে জোটের রাজনীতিতে যুক্ত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তবে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে গণতন্ত্র মঞ্চ জোটে সমমনা জোট ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি বিএনপি নেতারা। লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটা তাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। চলমান আন্দোলনে গণঅধিকার পরিষদসহ অন্য যেকোনো দল, সংগঠন বা ব্যক্তিকে তারা সবসময় সাধুবাদ জানাবে।
সূত্র জানায়, সমমনা দল ও জোটের দাবির সঙ্গে সমন্বয় করে আন্দোলনের যৌথ রূপরেখা ঘোষণা করতে বিলম্বের কারণে চলমান আন্দোলনে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিএনপির ১০ দফা ও গণতন্ত্র ফোরামের ১৪ দফা সমন্বয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে দলগুলো।