খরার মধ্যেও লিচুর ফলনে কৃষকের হাসি

0

প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষে বাজারে আসে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বিখ্যাত লিচু। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। কৃষকরা বলছেন, অতিরিক্ত খরার কারণে চলতি মৌসুমে লিচু অকালে পেকে গেছে। যার কারণে আকার তুলনামূলকভাবে ছোট। তবে এবার ফলন ভালো হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন তারা।

উপজেলার পানাম গাবতলী গ্রামের লিচু চাষি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া শুক্রবার জানান, এ বছর অতিরিক্ত খরায় লিচুর অনেক মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। তবে দুই দিন বৃষ্টি হওয়ায় আগের বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। এ কারণে চড়া দামে বাগান বিক্রি করেছেন।

মুকুল দেখে ব্যবসায়ীরা চুক্তিতে চাষিদের কাছ থেকে লিচুর বাগান কিনে নেন। নয়মাটি গ্রামের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন এ তথ্য দিয়ে বলেন, তাদের ব্যবসা সম্পূর্ণ ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বছর লিচুর দাম তুলনামূলক ভালো। কৃষকরা অন্যান্য বছরের তুলনায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন।

কৃষকরা জানান, উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক বাগান রয়েছে। সাধারণত কদমী, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, এলাচি, পাটি পাঁচ ধরনের লিচু চাষ করা হয়। তবে এর আকার বড় এবং বেশি রসালো হওয়ায় কদমি জাতের লিচু চাষে কৃষকরা বেশি আগ্রহী। এখন প্রতি ১০০ কদম লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। এছাড়া প্রতি ১০০ পাতা লিচুর বর্তমান বাজার মূল্য ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।

জানা গেছে, একটি বাগানের ন্যায্য মানের লিচু বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়। এ কারণে অনেকেই অন্যান্য ফসলের পরিবর্তে লিচু চাষের দিকে ঝুঁকছেন। সোনারগাঁ পৌরসভা, বৈদ্যেরবাজার, মোগরাপাড়া, বারদী, সানমান্দি ও সাদিপুর ইউনিয়নের গ্রামে লিচু বাগানের সংখ্যা বেশি। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, পৌরসভার সরদারবাড়ী, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বরিমজলিশ, দীঘিরপাড়, পানাম, অর্জুন্দি, বাগমুশা, দত্তপাড়া, ইছাপাড়া, কৃষ্ণপুরা, হাড়িয়া, সাহাপুর, পানাম গাবতলী, শোলপাড়া, ভট্টপুর এলাকায় উৎপাদিত লিচুর গুণগত মান খারাপ। এলাকা চমৎকার।

গাবতলী গ্রামের তাইজুল ইসলাম ও তার পাঁচ ভাইয়ের ছয়টি লিচু বাগান রয়েছে। তাইজুল জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি লিচু চাষ করে আসছেন। তার ২ বিঘা বাগানে ৬৫টি লিচু গাছ রয়েছে। তার মতে, এ বছর গরমের কারণে লিচু আগেই পাকে। কিন্তু আকারে এত বড় নয়।

তাইজুল জানান, প্রতি মৌসুমে তার বাগান থেকে প্রথম লিচু বাজারে যায় তবে এবার লিচু আকারে ছোট হলেও আগের দুই বছরের তুলনায় ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি।

গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার লিচু থেকে বেশি লাভবান হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আরেক বাগান মালিক আলী হোসেন। তবে আকারে ছোট হওয়ায় দাম নিয়ে চিন্তিত তিনি। সারসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়লে লাভ বেশি না হলে বিকল্প খোঁজার কথাও ভাবছেন তারা।

এদিকে, একটি সূত্র জানায়, অতিরিক্ত খরায় লিচুর পাকা রং ধরতে অসাধু লিচু চাষিরা বিষাক্ত ওষুধ ব্যবহার করেছে। ফলে কাঁচা লিচুও তার পাকা রং ধরে রাখে। অল্প সময়ে সাইজ বাড়াতে ক্ষতিকর হরমোন দিচ্ছেন অনেকে।

সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাতের অভাবে লিচু তেমন জন্মেনি। তবে লিচু বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন চাষিরা।

তিনি আরও বলেন, লিচু চাষিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মুকুল থেকে শুরু করে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *