কক্সবাজারে ট্রলার থেকে ১০ জনের লাশ উদ্ধার ।৫০ জন মাঝিমাল্লা হত্যা মিশনে অংশ নেয়

0

সন্দেহভাজন ১০ জলদস্যুকে প্রথমে বরফ ভাঙার যন্ত্র, বাঁশের লাঠি ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে মাছ ধরার হিমাগারে ১০ জনকে আটকে রেখে ট্রলারটি সাগরে ডুবে যায়। চারটি ট্রলারের অন্তত ৫০ জন মিডশিপম্যান এই মিশনে অংশ নেয়। তবে এর আগে সাগরে ট্রলার লক্ষ্য করে তিন ঘণ্টা গোলাবর্ষণ হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামির বক্তব্য ছাড়াও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়।

ট্রলারে ১০টি লাশ উদ্ধারের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আসামি বৈত্তা কামাল ও করিম সিকদারকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। করিম সিকদার সাক্ষ্য না দিলেও বৈত্তা কামাল রাজি হন।

গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কক্সবাজার সদরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদের আদালতে প্রায় তিন ঘণ্টা জবানবন্দি দেন বৈত্তা কামাল।

বৈত্তা কামালের সঙ্গে দেখা করতে ছুটে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা। আর ঘটনার দিন সাগরে কী ঘটেছিল এবং সাগরের ট্রলারে জেলারের সঙ্গে বৈত্তা কামালকে কী বলা হয়েছিল, তা বর্ণনা করেছেন আসামি বৈত্তা কামালের মেয়ে।

বৈত্তা কামালের মেয়ে সুমাইয়া বেগম বলেন, “ঘটনার দিন আমার মামা নবী হোসেন ফোন করে বলেন, আমার আরেক চাচা আনোয়ারের ট্রলার ধরেছে। পরে মা বিষয়টি জানালে আমি দ্রুত বাবাকে ফোন করে জানাই। চাচা আনোয়ারের ট্রলার ছুড়ে মারে। বাবা বলেন, জেলেরা ১৫ মিনিট সাগরে ডুবেছিলেন।এর পর বাবা অন্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

সুমাইয়া আরও বলেন, “ডাকাতরা চাচাদের পিটিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল। তারপর আরেকটি ট্রলার দেখে বললেন, আনোয়ারের ট্রলার নিচ্ছে; সবাই আসেন।’ এরপর ট্রলারে পতাকা টাঙানোর পর অনেক ট্রলার জলদস্যু ট্রলারটিকে অনুসরণ করে। এ সময় ডাকাতরা তিন ঘণ্টা ধরে গুলি চালায়। গুলিবর্ষণে একজন জেলে মারা যায় আর একজনের হাতে গুলি লাগে – আমি শুনেছি। এরপর ক্ষুব্ধ জেলেরা ডাকাতদের ট্রলারে উঠে তাদের মারধর করে; তখন আমার চাচা আরেক ট্রলার থেকে বলছিলেন, ‘ওদের মারবেন না, আমি প্রশাসনের হাতে তুলে দেব।’ কিন্তু চাচা বললেন, ‘কথা বলিস না, তোকে একদম কেটে ফেলব।’ তখন আমার চাচা আনোয়ারের ভয়ে সরে যান। তারপর সে তাদের মেরে ফেলেছে নাকি ফেলে দিয়েছে, সে জানে না। আমি বাড়িতে এসে এসব শুনেছি।”

ট্রলারে ১০টি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৫ জনকে আটক করেছে। এরই মধ্যে গত ৩০ এপ্রিল মামলার দুই আসামি ফজল কাদের ও আবু তৈয়ব ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এই দুই আসামি স্বীকার করেছেন, গত ৯ এপ্রিল তারা সাগরে কয়েকটি ট্রলারকে ঘিরে ধরে ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে মারধর করতে দেখেন। যারা মারধর করছিল তারা সবাই মহেশখালীর মানুষ। ফলে ঘটনাস্থল থেকে এ দুজন বাঁশখালী চলে যান। অপর আসামি গিয়াসউদ্দিনকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে আদালত।

মামলার ১ নম্বর আসামি বৈত্তা কামাল গত সোমবার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তদন্ত কর্মকর্তা ও কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি, রিমান্ডে বা জবানবন্দিতে তিনি কী বলেছেন।

তবে তিনি বলেন, মামলার ১ নম্বর আসামি কামাল জবানবন্দিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্তত ২০ জনের নাম প্রকাশ করেছেন।

দুর্জয় বিশ্বাস আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। আরও তদন্ত করার আছে। তদন্তের স্বার্থে সব কিছু বলা যাচ্ছে না। বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত চলছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যাও অনেক বেশি। সব বিষয়ে পুলিশের প্রচলিত পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া প্রযুক্তিগত তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য সব কারণ বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

গত ২৫ এপ্রিল ট্রলার থেকে ১০টি মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নিহত ট্রলারের মালিক শামছুল আলমের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে চার আসামিসহ অজ্ঞাত আরও ৫০ থেকে ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

গত ২৩ এপ্রিল গুরা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ট্রলার সাগরে ভাসমান লাশসহ তীরে আনা হয়। এরই মধ্যে উদ্ধার হওয়া ছয়জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলেও মর্গে চারটি লাশ ও একটি কঙ্কাল রয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *