ট্রলারে হত্যাকান্ড।সাগরে গুলি করেও রেহাই পায়নি কেউ।আরও একটি কঙ্কাল পাওয়া গেল, এর পেছনের কারণও বেরিয়ে এল

0

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলারে ডুবে নিহত আরেক ব্যক্তির কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে সোনাদিয়া এলাকায় কঙ্কালটি উদ্ধারের পর তা কক্সবাজার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে ১০টি লাশ পাওয়া গেছে। ১১ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই ট্রলারে আরও জেলে ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কেন সাগরে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে তার পেছনের তথ্যও বেরিয়ে আসছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর ছাড়াও পিবিআই ঘটনাটি তদন্ত করছে। মৃতদেহ উদ্ধারের ১২ দিন আগে চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, তদন্ত সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে গত ৭ এপ্রিল সামছুল মাঝির ট্রলারে করে কয়েকজন সাগরে যাত্রা শুরু করে। মূলত শামসুল ও নুরুল কবির নামে দুই জলদস্যু অন্যদের লোভে সাগরে নিয়ে যায়। . গত ৯ এপ্রিল সকালে শামসুলের ট্রলারের লোকজন আরেকটি ট্রলার ছিনতাই করে। এরপর তারা আরেকটি ট্রলারকে টার্গেট করে। তখন ওই ট্রলারের মালিক লাল পতাকা তুলে পাশের আরও কিছু ট্রলারকে তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার ইঙ্গিত দেন। অন্য ৫ জন ট্রলার এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এর মধ্যে ৪টি ট্রলারের নাবিকরা জলদস্যু ট্রলারটিকে ঘিরে ফেলে। এরপর জলদস্যুরা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে তাদের কার্তুজ ফুরিয়ে যায়। এরপর ৪টি ট্রলারে থাকা জেলেরা জলদস্যুদের পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর তাদের হাত-পা বেঁধে পেরেক দিয়ে হিমাগারে রাখে। পরে ট্রলারের তলা ফুটো হয়ে ডুবে যায়। মৎস্যজীবীদের ধারণা, লাশসহ ট্রলারটি ডুবে গেলে কেউ চিহ্ন খুঁজে পাবে না।

জানা গেছে, জলদস্যুদের লাশ গুমের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন বৈত্য কামাল। এ পরিকল্পনায় তাকে সহায়তা করেন আনোয়ার নামের এক ব্যক্তি। জলদস্যুরা যে শেষ ট্রলারটি লুট করার চেষ্টা করেছিল সেটি ছিল আনোয়ারের। সম্পর্কে বৈত্য কামাল আনোয়ার ভাই।

তদন্তের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে যে পাঁচটি ট্রলার জলদস্যুদের ঘিরে রেখেছিল, তার মধ্যে একটি ট্রলারে জলদস্যুদের একজনের ভাই ছিল। তিনি প্রথমে ঘটনাস্থল থেকে বাড়িতে ফোন করে স্বজনদের হত্যার কথা জানান। হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিকে এখনো খুঁজে পায়নি পুলিশ। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাকে সাক্ষী করা হবে।

আরেকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, জলদস্যুরা জেলেদের হত্যা করেছে। এ ঘটনায় অন্তত ৬০ জন জড়িত। শামসুল ও নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল সাধারণ জেলেদের। হত্যার এক সপ্তাহ আগে তারা সাগরে একটি ট্রলারও ছিনতাই করে। জলদস্যুরা সাধারণ জেলের ছদ্মবেশ ধারণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়াতে সমুদ্রে চলে যায়। এরপর জেলেদের কাছ থেকে জাল, মাছ ও ট্রলার চুরি হয়।

স্থানীয় আরেকটি সূত্র জানায়, জলদস্যু ট্রলারটিকে ঘিরে রাখার সময় জলদস্যুরা গুলি চালায়। একপর্যায়ে তিনি আরো কার্তুজের জন্য তাণ্ডব চালিয়ে থাকা জলদস্যুদের সহযোগিতা কামনা করেন।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

দুজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, গ্রেফতার দুই আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার বিকেলে পুলিশ আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে। পরে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চয়াঙ্গা তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দুর্জয় বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আদালতের আদেশ পেয়ে বুধবার থেকে তাদের রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এ ঘটনার অপর দুই আসামিসহ আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের পাঁচটি টিম কাজ করছে।

রিমান্ড মঞ্জুরকৃতরা হলেন, মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সিরার ডেল এলাকার মুহাম্মদ ইলিয়াছের ছেলে বৈত্য কামাল (৪৫) ও হোয়ানক ইউনিয়নের মোহরাকাটা গ্রামের মৃত মকবুল আহমদের ছেলে নুরুল করিম ওরফে করিম সিকদার মাঝি (৫৫)। . জবানবন্দিতে উল্লেখিত অপর দুই আসামি হলেন মাতারবাড়ির আনোয়ার হোসেন ও বাবুল মাঝি।

এর আগে ট্রলারে ১০টি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় চারজনের নাম ও ৫০-৬০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। নিহত ট্রলার মালিক শামসুল আলমের স্ত্রী রোকেয়া আক্তার বাদী হয়ে মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *