চট্টগ্রামে ঈদ বাজার। সবাই শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার জন্য ছুটছে
“বর্তমানে চাল, ডাল, তেল ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে সবজি, মাছ-মাংসের দাম আকাশচুম্বী। এর প্রভাব পড়েছে ঈদের বাজারেও। এ কারণে অভিজাত মার্কেট থেকে ঈদের কেনাকাটা করা সম্ভব হচ্ছে না। ইচ্ছে থাকলেও।আয় দিয়ে খরচের সমন্বয় করতে না পারলেও ঈদ উদযাপন করতে হয়।সারা বছর শিশুরা এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে।বাজারের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় হকার মার্কেটই একমাত্র ভরসা। এই মার্কেটে স্বল্পমূল্যে পুরো পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করার সুযোগ।তাই এখানে এসেছি।’ চট্টগ্রাম নগরীর জহুর হকার্স মার্কেটে আসা চাকরিজীবী আছিয়া খাতুন এমনই ভাবনা ব্যক্ত করেন।শুধু তিনি নন, তার মতো অনেক মধ্যবিত্ত মানুষ নিম্নবিত্ত ও নিম্ন আয়ের এই মার্কেটের ওপর ভরসা করে।অনেক মধ্যবিত্তরা এখানে ছুটছেন। অল্প টাকায় ঈদের কেনাকাটা করুন।
জহুর হকার্স মার্কেট চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানের পশ্চিমে আদালত ভবনের পাদদেশে অবস্থিত। এই অঞ্চলের বৃহত্তম টেক্সটাইল পাইকারি ও খুচরা বাজার হওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে। এক সময় এখানে বিদেশী পুরাতন কাপড়ের রমরমা ব্যবসা ছিল। তবে এখন দেশি-বিদেশি পোশাকের সরবরাহ বেড়েছে। ফেলে দেওয়া কাপড়ের বড় চালানও এখানে আসে। সাশ্রয়ী মূল্যের জামাকাপড়ের জন্য বিখ্যাত, এই মার্কেটে সব ধরনের এবং বয়সের কাপড় এক জায়গায় পাওয়া যায়। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের স্বস্তির জায়গা হিসেবেও পরিচিত এই বাজার।
তবে সময়ের পরিবর্তনে জহুর হকার্স মার্কেটের আগের চেহারাও পাল্টে গেছে। এখন এই মার্কেটে ভবনসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট রয়েছে। এরকম অন্তত ১০টি মার্কেটে হাজার হাজার ছোট-বড় দোকান রয়েছে। আর পুরো জাহোর হকার্স মার্কেটে রয়েছে আড়াই হাজারের বেশি দোকান। এই ভরসার বাজারে ২০ টাকায়ও পোশাক কেনার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ছোট থেকে বড় ছেলে-মেয়ে, ছোট-বড় থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত এখানে শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রি-পিস, জুতা, মোজা, বেল্ট, টুপি, ব্যাগসহ সব ধরনের পণ্য কিনতে পারবেন। , ঠোঙা, জার্সি, বিছানার চাদর। সুযোগ আছে। সারা বছরই গরিব, অসহায়, ক্ষুধার্ত নিম্নবিত্ত মানুষে ভরপুর থাকে পুরো বাজার। আর ঈদ এলেই মানুষের সমাগম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কম দামে ঈদের কেনাকাটা করার সুযোগ থাকায় উপজেলার গ্রামগঞ্জের অনেকেই এখানে ঈদের কেনাকাটা করতে ছুটে আসেন। তবে নিম্নবিত্ত ছাড়াও এবার জহুর হকার্স মার্কেটের বড় একটি অংশের ক্রেতা মধ্যবিত্ত।
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সদস্য সচিব ফজলুল আমিন বলেন, কম দামে ভালো মানের পণ্যের জন্য জহুর হকার্স মার্কেটের অনন্য সুনাম রয়েছে। তবে এবার গরিব-অসহায় নিম্নবিত্তের পাশাপাশি অনেক মধ্যবিত্তরাও আসছেন ঈদের কেনাকাটায়।
ঈদের আর মাত্র এক-দুই দিন বাকি। তাই এখন জহুর হকার্স মার্কেট দিনরাত ব্যস্ত। সারফেস মার্কেটের প্রবেশদ্বার দিয়ে গেলেই দেখা যায় শুধু মানুষের স্রোত। এই ভিড়ে শিশু-নারীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ রয়েছে। নগরীর আমতলের চাকরিজীবী জুলেখা বেগমকে দেখা যায় পরিবার নিয়ে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, বর্তমান নিম্ন বাজারে অল্প টাকায় দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। তার পরও ঈদ করতে হবে। বাড়িতে তিন সন্তান আর বৃদ্ধ বাবা-মা। স্বামী দুর্ঘটনায় একটি পা হারিয়ে তিন মাস ঘরে বন্দী। আগে পাশের মার্কেট থেকে ঈদের কেনাকাটা করতাম। কিন্তু এবার আর সাহস হল না।
গৃহবধূ ফারহানা বেগম জানান, জহুর হকার্স মার্কেটের পাশের নিউমার্কেটে পরিবারের সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ছোট শিশুর ৫০০ টাকার শার্ট চাইছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এত টাকা দিয়ে আমার মতো মধ্যবিত্তের পক্ষে ঈদের কেনাকাটা করা অসম্ভব। তাই এই বাজারে এসেছি।