একের পর এক আগুন ঘিরে সন্দেহ, নানা প্রশ্ন

0

বঙ্গবাজার থেকে নিউ সুপার মার্কেট। মাঝখানে ১০ দিনের ব্যবধান। এরই মধ্যে রাজধানীর আরেকটি বড় মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার নবাবপুরের একটি মার্কেটে এবং শুক্রবার হাজারীবাগের একটি ট্যানারিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঈদের আগে ঢাকার জনপ্রিয় দুটি মার্কেটে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহ দেখা দিয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর- কেউই সন্দেহ প্রকাশকারীদের উর্ধ্বে নয়। এমনকি সরকারের একাধিক মন্ত্রী, ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারাও মার্কেটে আগুন নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। যদিও বঙ্গবাজারের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে নাশকতার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে জনগণের মন থেকে ‘অবিশ্বাস’ মুছে যায় না।

গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে কমপ্লেক্সের তিনটি ছাড়াও আরও চারটি মার্কেট পুড়ে যায়। পুলিশ সদর দপ্তরের একটি ভবনও আগুন থেকে রেহাই পায়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) গঠিত আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ১১ এপ্রিল সংগঠনটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রাথমিকভাবে আদর্শ মার্কেটের তৃতীয় তলাকে চিহ্নিত করা হয়। আগুন মশার কয়েল বা সিগারেট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩০৩ কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগুন নাশকতা কি না তা নিশ্চিত করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। এর আগে বৃহস্পতিবার সুরিটোলার নবাবপুর টাওয়ারের পাশে আরেকটি মার্কেটে আগুন লেগে প্রায় ৩০টি দোকান ও প্লাস্টিকের গুদাম পুড়ে যায়। শুক্রবার হাজারীবাগে আরেকটি ট্যানারিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড কি নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতার কাজ তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব ঘটনায় ষড়যন্ত্র বা নাশকতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে কেন বেশ কয়েকটি মার্কেটে আগুন, কেন আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে বাধা দেওয়া হচ্ছে, কেন ফায়ারম্যানদের ওপর হামলা হচ্ছে, এসব ঘটনা কি বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসংযোগ করেছে? আমরা জানি, কিছু রাজনৈতিক দল ঈদের পর আন্দোলন করবে, অর্থনীতিকে পঙ্গু করবে এবং সরকারকে উৎখাত করবে; কিন্তু কী অপরাধ করেছে এই সাধারণ মানুষ? সাধারণ ব্যবসায়ীরা কি অপরাধ করেছে? সাধারণ ক্রেতারা কী অপরাধ করেছিল?’

শনিবার সুনামগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিউ সুপার মার্কেটে নাশকতার কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, ঘটনাটি রহস্যজনক। গতকাল পৃথক বাণীতে তিনি বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের উদাসীনতা, উদাসীনতা ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণে এ ধরনের মর্মস্পর্শী ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

গতকাল সকালে নিউ সুপার মার্কেট এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্রিফিংকালে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন জানান, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট ভবনের তৃতীয় তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। বিষয়টি নাশকতা কি না তা তদন্ত করে দেখার অনুরোধও জানান তিনি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বাজারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া এমন প্রতিকূল আবহাওয়ায় যেকোনো ছোট দুর্ঘটনায় মারাত্মক অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা সবকিছু খতিয়ে দেখছি। এগুলো নিছক দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে- সেটাও দেখা যাচ্ছে।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের প্রতিটি ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে। যে কোনো নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো ধরনের নাশকতা আছে কিনা তা নিয়ে কাজ করছে র‌্যাবের গোয়েন্দারা।

এদিকে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। দুর্ঘটনার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে না। মানুষ এর সঠিক কারণও জানে না। এসব ক্ষেত্রে আগুনের উৎস কী তা খুঁজে বের করতে হবে। নিউ সুপার মার্কেটের আগুনও তদন্ত সাপেক্ষে। সুনির্দিষ্ট কারণ অনুসন্ধানের দায়িত্ব হবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের। সেক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড বা ফায়ার কোডে কোনো ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করতে হবে। গ্রহণযোগ্য কারণ খুঁজে না পাওয়া গেলে, এই ঘটনার পরে ডালপালা পড়া শুরু হবে। মানুষের মনে সন্দেহ বাড়তে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *