৫০০ সিসির মোটরসাইকেলে চলাচলের অনুমতি পাচ্ছে
ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবে ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেলের নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অতীতে দুর্ঘটনা বাড়ার আশঙ্কায় নিবন্ধনের বিপক্ষে থাকলেও অনুমোদনের দিকে এগোচ্ছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়।
তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রথম বৈঠকে নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সড়ক পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ইউছুব আলী মোল্লা বলেন, সিদ্ধান্ত নিতে আরও বৈঠক হবে।
পরিবহন খাতের স্টেকহোল্ডাররা বলছেন, প্রস্তুতকারক ও আমদানিকারকদের প্রস্তাবসহ ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল নিবন্ধনের জন্য একটি কোম্পানির ওপর চাপ রয়েছে। এ কারণে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০১৭ থেকে, বিআরটিএ ১৬৫ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল নিবন্ধন করছে। এজেন্সির মতো, পুলিশও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিনযুক্ত মোটরসাইকেল চালাতে দেওয়ার বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে যুক্তি হলো, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন যুক্ত মোটরসাইকেলে দ্রুত পালিয়ে যাবে অপরাধীরা। তবে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিনযুক্ত মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারে।
তবে গত বছরের এপ্রিলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নীতিমালা সংশোধন করে ৫০০ সিসি মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানির অনুমতি দেয়। একই সঙ্গে দেশে উৎপাদন ও অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রির অনুমতি রয়েছে। বিদেশে রপ্তানির অনুমতি ইতিমধ্যেই রয়েছে। অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও বিআরটিএ নিবন্ধন না করায় কোম্পানিগুলো ১৬৫ সিসির বেশি ধারণক্ষমতার মোটরসাইকেল বিক্রি করতে পারছে না। নিবন্ধনের অনুমতি দিলে এই বাধা থাকবে না। গত নভেম্বরে বিআরটিএ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানায়, মোটরসাইকেল চালকদের বেশির ভাগই তরুণ। ফলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন যুক্ত মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি দিলে দুর্ঘটনা বাড়বে।
যুক্তরাজ্যের রয়্যাল এনফিল্ড বাংলাদেশে মোটরসাইকেল তৈরি ও বিপণন শুরু করেছে। দেশীয় কোম্পানি ইফাদ অটোস একটি কারখানা স্থাপনের জন্য চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে ৩০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। কোম্পানিটি ৩৫০ থেকে ৫০০ সিসি মোটরসাইকেল তৈরির জন্য রয়্যাল এনফিল্ডের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
বাংলাদেশের রানার অটোমোবাইলস ইতোমধ্যে ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে। জাপানের সুজুকি এবং কাওয়াসাকি বাংলাদেশে ২৫০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন যুক্ত মোটরসাইকেল তৈরি ও বাজারজাত করার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে।
মোটরসাইকেল ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, এর আগে বিরোধিতা করেও কোম্পানিগুলোর ‘অ্যাডভোকেসি’তে ৫০০ সিসি মোটরসাইকেলের অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। ইফাদ অটোসের ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব গতি পেয়েছে। সম্প্রতি ধামরাইয়ে কোম্পানির কারখানায় কর্মশালায় অংশ নেন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রহস্যজনক কারণে বিআরটিএ এখন আর আগের মতো বিরোধিতা করছে না। গত রোববারের বৈঠকে অংশ নেওয়া সংগঠনটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার অবশ্য বলেন, নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আরো অনেক ধাপ বাকি আছে। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করে ।
৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানি ও বিক্রির সুবিধা এবং অসুবিধায় বিভক্ত নির্মাতারা এবং অ্যাসেম্বলাররা। যেসব কোম্পানি ১৬৫ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল তৈরি করে তারা এর বিরুদ্ধে। তাদের যুক্তি, ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল বিক্রির অনুমতি দিলে আগের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেশি সিসির মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়বে। তাদের তৈরি মোটরসাইকেলের বিক্রি কমে যাবে।
বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মতিউর রহমান উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ভারতীয় কোম্পানি বাজাজ ৩০০ ও ৩৫০ সিসি মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলেছে। তারা আগামী জুলাইয়ে আসবে। উচ্চ সিসি মোটরসাইকেলের নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি, নিবন্ধন ফি বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত। লাখ টাকা ফি হলে ক্রেতারা কিনবেন না।