হামাগুড়ি জীবনের দৃঢ়তা
২ এপ্রিল রবিবার দুপুর ১ টায় একজন লোক কম্পিউটারে ডিজাইনের কাজ করছে। পা দিয়ে মাউস চালাচ্ছেন বাঁকা হাতে কীবোর্ডে কাজ করা। তার শারীরিক গঠন অন্য ১০ জনের মতো স্বাভাবিক নয়। তার দুই হাত ও দুই পা বাঁকা। তবে কম্পিউটারের দক্ষতা অন্যদের থেকে কম নয়।
উপরের গল্পটি ২৩ বছরের পুরানো। ইব্রাহিমের তিনি দিনাজপুর ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ডিআইএসটি) পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা অধ্যয়ন করেন। ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন। ফলাফলের অপেক্ষায়।
ইব্রাহিম পার্বতীপুরের হামিদপুর ইউনিয়নের উত্তর চৌহাটি এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। বড় ভাই বিয়ে করে বর্তমানে আলাদা থাকেন। বোনের বিয়ে হয়ে গেল। তার রাজমিস্ত্রি বাবার মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা। এ আয়েই চলছে তাদের সংসার।
ইব্রাহিম হাতিয়ার নিয়ে হামাগুড়ি দিল। এভাবেই তিনি স্কুল-কলেজে যেতেন। সস্তা হোস্টেলে থাকুন। তিনি কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, মার্কেটিং প্রমোশনের কাজ জানেন।
মো: ইব্রাহিম বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে এমনই বানিয়েছেন। কিন্তু বসলাম না। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে না। আমি কিছু শিখতে চেয়েছিলাম। ঈশ্বরের রহমতে, আমি কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়াশুনা করেছি। আমি সবকিছু ভালভাবে শিখেছি। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ আমাকে একটা চাকরি দিন। আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি, দেশ ও দেশের সেবা করতে পারব।
ডিআইএসটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষক শাহাদাত হোসেন বলেন, সাত বছরে অনেক শিক্ষার্থীকে পড়িয়েছি। তাদের মধ্যে ইব্রাহিম খুব ভালো ছাত্র। তার জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, কাজের প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। ইব্রাহিম কাজকে ভালোবাসতে শেখে। নিজের চেষ্টায় অনেক কিছু শিখেছেন। বর্তমানে মার্কেটিং প্রমোশন চাকরির চাহিদা অনেক। তিনি এই কাজটি খুব ভালো করতে পারেন।
ডিআইএসটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মামুন ফেরদৌস বলেন, ‘তিনি যখন আমাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন, আমি একটু হতাশ হয়েছিলাম! সে পারবে নাকি? কিন্তু আমি দেখেছি যে তিনি সবকিছু করতে সক্ষম হয়েছেন এবং অবশেষে তার কোর্সটি ভালভাবে সম্পন্ন করেছেন। আমি তাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য সবার কাছে আবেদন করব।