রবিউলকে পেতে ইন্টারপোলে চিঠিও দিয়েছিল পুলিশ

0

দুবাইতে পুলিশ অফিসার হত্যা মামলার আসামি আরভ খানের মালিকানাধীন আরভ জুয়েলার্সের শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে  ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান সমালোচনার ঝড় তোলেন। বহুমুখী আলোচনাকে তুঙ্গে রেখে গতকাল দুবাইয়ের স্থানীয় সময় রাত ৮টায় জুয়েলার্সের শোরুমের উদ্বোধন করেন সাকিব।

জুয়েলার্সের মালিক আরভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। সে বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি। সেই মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিবি) ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। রবিউলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়াও অস্ত্র, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধের ৯টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। , জালিয়াতি। তাকে দুবাই থেকে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে চিঠিও পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

এদিকে হত্যা মামলার আসামি রবিউল কীভাবে দুবাই গিয়ে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক হলেন- তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও তার পরিবার দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছিল। এখন রবিউল তার বাবা-মা ও বোনকে নিয়ে দুবাই গেছে। একটি সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার টাকায় দুবাইয়ে ব্যবসা শুরু করেন রবিউল। দুবাইয়ের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে রবিউল রহস্যময়। দুবাইয়ে কোনো বাংলাদেশিকে খুব বেশি সম্পদের মালিক এবং রাজকীয়ভাবে চলাফেরা করতে দেখা যায়নি।

হত্যা মামলার সাজা থেকে বাঁচতে আবু ইউসুফ লিমন নামে এক যুবককে বিকেএসপিতে খেলার জন্য প্রলুব্ধ করে এবং তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয় রবিউল। এই ফাঁদে পা দিয়ে লিমন নিজেকে রবিউল পরিচয় দিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে। পরে আদালত লিমনকে কারাগারে পাঠান। এদিকে রবিউল সরকারি এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহায়তায় জাল পাসপোর্ট তৈরি করে দুবাই যান। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত লিমনকে খালাস দেন।

পুলিশ সদর দফতরের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর রহমান বলেন, ইন্টারপোল পুলিশের সহায়তায় রবিউলকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

ডিবির খিলগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শহিদুর রহমান জানান, পলাতক আসামি রবিউল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুটিয়া গ্রামের মতিউর রহমান মোল্লার ছেলে। তিনি আপন, সোহাগ, হৃদয় নামেও পরিচিত। তার পাসপোর্টের বিবরণ পাওয়া গেছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতে সোপর্দ করার চেষ্টা চলছে।

দুবাইয়ে রবিউল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে উপস্থাপক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাসকেও। তিনি এখন দুবাইয়ে আছেন। এ বিষয়ে দেবাশীষ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে একজন অভিনয়শিল্পী মনে করি। দেশে বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য অনেকেই আমার সাথে যোগাযোগ করেন। যদি সময় এবং অর্থের ব্যাপার থাকে, আমি দেখাব। এই শো অনেক আগে যোগাযোগ করা হয়েছিল. আর বলা হচ্ছে, দুবাই আসার পর ওকে দেখে আর ভালো লাগেনি। তিনি আমাদের যথেষ্ট বিনোদন দিচ্ছেন। তবুও মানুষের মনে কি আছে তা তার চেহারা বা দৃষ্টিভঙ্গি দেখে বোঝা যায় না।

ডিবি জানায়, তদন্তে দেখা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা মামুনকে হত্যার পর আসামি রবিউল ভারতে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে তিনি আবু ইউসুফ নামে এক ব্যক্তিকে তার নামে আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য নিয়োগ দেন। আত্মসমর্পণের পর ৯ মাস জেলে ছিলেন ওই ব্যক্তি। পরে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে তার আসল পরিচয় প্রকাশ করেন। রবিউল ২০২০ সালে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে তার পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। সেখানে রবিউলের নাম আরাভ খান ও বাবার নাম জাকির খান, মা রেহানা বিবি খান ও স্ত্রী সাজিমা নাসরিন। গোপন রাখা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, আরভের জন্ম ৩১ জুলাই ১৯৯৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুরে। তবে রবিউলের ঘনিষ্ঠ একজন নিশ্চিত করেছেন, তিনি আপন আরাভ নামে পরিচিত এবং তার জন্ম গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। বাংলাদেশে তার নামে একটি মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার ৩১ অক্টোবর ২০২১ তারিখে আরভকে তিন বছরের আবাসিক অনুমতি দেয়।

কোটালীপাড়ার হিরণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না জানান, রবিউল পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা ছাড়াও আরও কয়েকটি মামলার আসামি। বিভিন্ন সময় তার খোঁজে ওই ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামে পুলিশ এসেছে। গত আড়াই মাস আগে তিনি ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে যান। এরপর রবিউল তাকে রিয়াদে ডেকে নিয়ে দেখা করে। এরপর তিনি দুবাইয়ে তার জুয়েলারি ব্যবসার কথা জানান।

সম্প্রতি, সাকিব আল হাসান ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে বলেছেন যে তিনি আরভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনে উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশের বিনোদন জগতের বেশ কয়েকজন তারকাও সেখানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ খবর প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পলাতক আসামি রবিউলের নাম সামনে আসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *