রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করতে টেকনাফে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল

0

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা করতে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌঁছেছে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল। প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত নিখোঁজ রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যদের যাচাই-বাছাই করতে মিয়ানমার থেকে প্রতিনিধি দলটি এসেছে বলে জানা গেছে। এরপর বুধবার সকাল ১১টা থেকে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন তারা।

মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল এখন রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রশ্ন করছে বলে জানা গেছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি এবং সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা এখানে উপস্থিত রয়েছেন।

এর আগে সকালে মিয়ানমারের কারিগরি দলের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্পিডবোটে করে টেকনাফ মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিতে পৌঁছায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, লেদা-নিয়াপাড়া ক্যাম্পে বসবাসরত ২০টি পরিবারের ৭০ জন রোহিঙ্গাকে ধাপে ধাপে নিরাপত্তার মাধ্যমে বাসে করে টেকনাফ স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে রেস্ট হাউস পেন্ডলে নিয়ে আসা হয়। এরপর একে একে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে সম্প্রতি হঠাৎ করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়ায় মিয়ানমারের পাইলট প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ থেকে এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে। যাইহোক, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের তিন মাস পর নভেম্বর ২০১৭ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করলেও গত ছয় বছরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ ছাড়া, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রত্যাবাসনের একটি রাউন্ড শুরু করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ২০১৯ সালে প্রত্যাবাসন পুনরায় শুরু করার প্রচেষ্টা পরে চীন মধ্যস্থতা করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। তারপরে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, দেশটির সেনাবাহিনী একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে ক্ষমতা দখল করে। এ ঘটনার পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আর আলোর মুখ দেখেনি।

আরআরআরসি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আজকের বৈঠকটি মূলত মিয়ানমারে পাঠানো রোহিঙ্গাদের তালিকা যাচাই-বাছাই নিয়ে। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রেরিত তালিকা থেকে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে যাচাই করা সব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন তালিকা নিয়ে আলোচনা চলবে। এর আগে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারকে ৮ লাখ ৬২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে। বাংলাদেশের দেওয়া এই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয় মিয়ানমার। প্রাথমিকভাবে পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের আওতায় এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা রয়েছে।

তালিকার বাইরে, পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার রুট ম্যাপ নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু এই বৈঠক মানেই প্রত্যাবাসনের সূচনা নয়।

এ প্রসঙ্গে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মূলত ২০১৮ সালে, বাংলাদেশ মিয়ানমারকে ৮৮২,০০০ রোহিঙ্গার তালিকা দেয়। এরপর মিয়ানমার ফেরত আসা ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাঠায়। পরিবারের অনেক সদস্য বাদ পড়েছেন। বিষয়টি তাদের (মিয়ানমার) অবহিত করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে তারা (মিয়ানমার) বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করছে, কেন তারা বাস্তুচ্যুত হচ্ছে এবং তাদের নথিপত্র দেখছে। সেজন্য মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে।

মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে আসা টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা ড. জাফর বলেন, “আমদারকে মিয়ানমার থেকে এএসএ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করার জন্য ডাকা হয়েছে। আমার মতো আরও অনেকে এসেছেন। মূলত মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। বৈঠকের পর বিস্তারিত বলা যাবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *