আহমদিয়া জলসা নিয়ে পঞ্চগড়ে রণক্ষেত্র, ২ নিহত, ৫০ আহত
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বার্ষিক জলসা বন্ধকে কেন্দ্র করে পুলিশের সংঘর্ষে পঞ্চগড় শহর শুক্রবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক শ রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুই যুবক।
এ ছাড়া সাংবাদিক ও পুলিশসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষুব্ধ মুসলমানরা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীদের কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে এবং ২০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১৭ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জনসংযোগ বিভাগ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ পরিষদের সমর্থকরা আহমদিয়া (কাদিয়ানি) সম্প্রদায়ের বার্ষিক জলসা বন্ধ এবং তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ করে। জুমার নামাজের পর নগরীর শেরেবাংলা পার্ক মোড়ে বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লিরা জড়ো হন। বিক্ষুব্ধ মুসল্লিদের সঙ্গে কয়েকজন দেশি-বিদেশি যুবক রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় আরিফুর রহমান (২৭) ও ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসান (২২) নামে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। আরিফুর শহরের ইসলামবাগ এলাকার ফরমান আলীর ছেলে ও জাহিদ নাটোর জেলার বনপাড়া উপজেলার বাসিন্দা ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারী। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে রাত ৮টার দিকে বার্ষিক জলসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সূত্র জানায়, মুসল্লিদের বিক্ষোভ ও অবরোধের কারণে যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীরাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এতে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। সন্ধ্যার পরও পুলিশ মুসল্লিদের ধাওয়া দেয়, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষুব্ধ মুসলমানরা সিনেমা হল রোডে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীদের বেশ কয়েকটি ব্যবসা লুট করে, অন্তত ২০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে যেতে দেখা যায়নি। বিক্ষুব্ধ জনতা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকে ঘটনাস্থলে যেতে দেয়নি। এ সময় তারা দোকানের কয়েক লাখ টাকার মালামাল বের করে পুড়িয়ে দেয়। আন্দোলনকারীরা শহরের রিগ্যাল ফার্নিচার, ভিশন শোরুমসহ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বেশ কয়েকটি স্থাপনাও ভাঙচুর করে। পঞ্চগড় বাজার এলাকায় কয়েকটি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে আন্দোলনকারীরা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এসএ টিভির পঞ্চগড় প্রতিনিধি কামরুজ্জামান টুটুল ও ফাহিম নামে এক সাংবাদিককে মারধর করেছে বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা। সাংবাদিক টুটুল বলেন, আমার ওপর যারা হামলা করেছে তারা কেউ পঞ্চগড়ের নয়। আমি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা পেশায় থাকলেও তাদের কাউকেই চিনি না। হামলা চালায় প্রায় ২০ জন যুবক। তারা বহিরাগত। জেলার বাইরে থেকে আসছে।
তবে ঘটনার সময় পুলিশ কয়েকজন যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের ইনচার্জ চিকিৎসক ডা. রহিমুল ইসলাম বলেন, আরিফুর রহমানের মাথায় সম্ভবত গুলি লেগেছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা মুশকিল। কিন্তু মাথা থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিই।
জেলা সম্মিলিত খতমে নবুওয়াত পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কারী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, শুক্রবার আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। বার্ষিক জলসা নিষিদ্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বৃহস্পতিবার আমরা বিক্ষোভ করেছি। শুক্রবার বিক্ষুব্ধ তৌহিদী জনতা মিছিল বের করলে প্রশাসনের পরামর্শে শেরেবাংলা পার্ক মোড় থেকে যারা মিছিল করছিল তাদের ধরে আমরা বাড়ি চলে যাই। তার পরে, আমরা কে জানি না