হুন্ডি ছেড়ে বৈধ চ্যানেলে ফিরছেন প্রবাসীরা

0

বৈধভাবে বিদেশে আয় করেন। কিন্তু অবৈধ হুন্ডি লেনদেনের মাধ্যমে দেশে সুবিধাভোগীর কাছে টাকা পাঠান। একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধভাবে সংগ্রহ করা অর্থ সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) অর্থ স্থানান্তরের সাথে জড়িত বিভিন্ন এমএফএস প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬,০০০ এজেন্টকে চিহ্নিত করেছে। একই সঙ্গে ৫ হাজার ৫৫৭ জন সুবিধাভোগীকে চিহ্নিত করে তাদের এমএফএস অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। অবৈধভাবে টাকা না আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় তিন হাজার অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করা হয়েছে। তাদের অনেকেই এখন বৈধ মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বাইরে শ্রমিক যাওয়া বাড়লেও রেমিটেন্স কমে যাওয়ার মূল কারণ হুন্ডি। সাধারণত হুন্ডির টাকাই চোরাকারবারিদের কাজে লাগে। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে সব ব্যাংক রেমিটেন্সের জন্য একক হার নির্ধারণ করে। এভাবে গত জুলাই-আগস্টে যেখানে প্রবাসীরা প্রতি ডলার পাঠানো হতো ১১০ থেকে ১১৪ টাকা, সেখানে এখন পাচ্ছেন ১০৭ টাকা। এ কারণে জুলাই ও আগস্ট মাসে গড়ে ২০৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। কিন্তু পরে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে তা নেমে আসে ৬৩৬ কোটি বা গড়ে ১৫৯ কোটিতে। হুন্ডির প্রবণতা রোধে বিএফআইইউ-এর বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম মাসে রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯৬ মিলিয়ন ডলারে। আগামী মাসে এটি আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিএফআইইউ এ পর্যন্ত ৫,৭৬৬ সন্দেহভাজন এজেন্টকে চিহ্নিত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে হুন্ডির সঙ্গে জড়িত ২ হাজার ২৬৬ এজেন্ট ও তিনজন পরিবেশকের এজেন্সি বাতিল করা হয়েছে। আর বিএফআইইউর ৫ হাজার ৫৫৭ জন সুবিধাভোগীর এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্লক করে জমার পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৫৩টি অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করা হয়েছে। বাকি ২ হাজার ৬১৪টির মধ্যে শুধু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ জনের বেশি অ্যাকাউন্টধারী তাদের অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করার জন্য লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। বিএফআইইউ এর কাছে যা বর্তমানে পর্যালোচনাধীন রয়েছে। এ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখছে সংস্থাটি।

বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা বলেন, হুন্ডির চাহিদা বেড়েছে এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স কমেছে। করোনাভাইরাসের শুরুর দিকের পরিস্থিতি এর উদাহরণ। করোনার শুরুতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়। ফলে অর্থ পাচারের চাহিদা সম্পূর্ণ কমে যায়। এ কারণে করোনার মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যাইহোক, সেই সময়ে বিশ্বব্যাপী আয় হ্রাস পেয়েছে। শ্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেকেই চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। তিনি বলেন, করোনার প্রভাব কমতে শুরু করার পর গত অর্থবছরে অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করে। এরপর টাকা পাচারের চাহিদা বেড়ে যায়। এটি বৈধ চ্যানেলের প্রবাসী আয়কে প্রভাবিত করে। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স ৩ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার বা ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কমে ২ হাজার ১০৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু গত অর্থবছরে রেকর্ড সংখ্যক কর্মী বিদেশে গেছেন কাজের জন্য।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা কিনে এখানকার সুবিধাভোগীর কাছে টাকা পৌঁছে দেয়। তারা সুবিধাভোগীর কাছে টাকা পাঠানোর মাধ্যম হিসেবে MFS ব্যবহার করে। এ ছাড়া নগদ বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সুবিধাভোগীর কাছে টাকা পৌঁছানোর অনেক অভিযোগ বিএফআইইউর কাছে রয়েছে। সব ক্ষেত্রেই প্রবাসীর সুবিধাভোগীর নম্বর এবং টাকার পরিমাণ লিখে এজেন্টের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তারা কোনো সার্ভিস চার্জ ছাড়াই দ্রুত সুবিধাভোগীর কাছে টাকা পৌঁছে দেয়। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা আনতে গড়ে খরচ হয় টাকা। আর ব্যাংকগুলো বর্তমানে প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা দিলেও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ১১০ থেকে ১১১ টাকা দেয়। আবার প্রবাসীদের দূরের ব্যাংক শাখায় গিয়ে টাকা দিতে হয়। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা কর্মস্থলে গিয়ে টাকা এনে দ্রুত পৌঁছে দেয়। বিদেশ থেকে অবৈধ রেমিটেন্সের বিরুদ্ধে দমন এবং বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রচারের কারণে পরিস্থিতির এখন উন্নতি হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *