এ বার তৃণমূলের পাল্টাপাল্টি।আধঘাট বেঁধে মাঠে নামছে বিএনপি

0

এবার রাজপথে নয়- প্রধান দুই দলের শোডাউন হবে তৃণমূল পর্যায়ে। আগামী শনিবার সারাদেশে ইউনিয়নগুলোতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। গত ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এর একদিন পর বৈঠক করে ওইদিনই ‘শান্তি সমাবেশ’ করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ।

সড়ক অবরোধ করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি। দলটি ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে। এ জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী শনিবার যৌথ আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার মাধ্যমে তৃণমূলকে জাগিয়ে তুলবে দলটি।

সারাদেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়নে ৪১ হাজার ১৩৯টি ওয়ার্ড। ওইদিন নেতাকর্মীরা এসব ওয়ার্ড থেকে মিছিল বের করে ইউনিয়ন সদরে যাবেন। সেখান থেকে শুরু হবে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা। অন্তত তিন কিলোমিটার পদযাত্রা করার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষিত ইউনিয়ন পদযাত্রা কর্মসূচিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে সরকার উৎখাতের আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে চান। তার নির্দেশনায় ইতোমধ্যে উপজেলা, জেলা পর্যায়ের নেতারা তৎপরতা শুরু করেছেন। কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি সভা, উঠান বৈঠক,  লিফলেট বিতরণ, প্রচার মিছিলসহ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছেন।

ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচিতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে একত্রিত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি, আওয়ামী সরকারের দমন-পীড়ন ও সন্ত্রাস বন্ধ, পদত্যাগসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। গণতন্ত্রবিরোধী সরকার, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আন্দোলনের একটা নির্দিষ্ট ধরন, বিজ্ঞান ও একটা নির্দিষ্ট রসায়ন আছে। এতক্ষণে মানুষ জেগে উঠেছে। অধিকার পুনরুদ্ধারের লড়াই শুরু হয়েছে। সব দল ঐক্যবদ্ধ। আরো থাকবে। এই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে জনগণ আন্দোলনের পথ দেখাবে- যেভাবেই হোক আমরা এই সরকারকে পরাজিত করতে পারি। এ কারণে তারা বারবার জনগণের কাছে ফিরে যাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তারেক রহমান সোমবার রাতে ১০ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেন। উক্ত সভায় ইউনিয়নের পদযাত্রা সফল করতে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ওই দিন তিনি শুধু জেলা ও উপজেলা নেতাদের নয়, কেন্দ্রীয় নেতাদেরও কর্মসূচি বাস্তবায়নে দায়িত্বশীল হওয়ার কথা বলেন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা এলাকাভিত্তিক নেতাদের এলাকায় যাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে এমপি প্রার্থী ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদেরও এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচি বাস্তবায়নে কেন্দ্র থেকে মনিটরিং টিম গঠনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। যেসব এলাকায় ঢিলেঢালা কর্মসূচি পালন করা হবে, সেসব এলাকার নেতাদের ক্ষমার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। দলের হাইকমান্ডও এক ধরনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ভবিষ্যতে পদ বা মনোনয়নে তাদের সঙ্গে অন্যরকম আচরণ করা হবে। যারা এলাকায় যাবেন না, বা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন না, তাদের বিষয়ে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা এমনকি জেলা কমিটিও তাদের দায়িত্ব নিতে হবে বলে দলীয় হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। এ কর্মসূচি সফল হওয়ায় শিগগিরই উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত করার পর সময় ও সুযোগ বুঝে এক দফা সরকার পতন নিয়ে মাঠে নামতে চান তারা।

বিভিন্ন ইস্যুতে ২২ আগস্ট থেকে রাজপথে রয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১০টি বিভাগীয় সমাবেশ, ঢাকা মহানগরীতে ১৬টি সমাবেশ ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলনসহ ৩৫টির বেশি সমাবেশ করেছে দলটি। গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একযোগে আন্দোলন শুরু করে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি তৃণমূলকে শক্তিশালী ও শক্তিশালী রাখতে চায়, যাতে আগামী কর্মসূচি সফল হয়।

তবে কর্মসূচি বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতারা বলেন, এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *