তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩০০
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত অঞ্চলে ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৪,৩০০ ছাড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
তুরস্কে ২,৩০০ জন নিহত এবং ১৩,২৯৩ জন আহত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সাত হাজার ৩৪০ জনকে।
সিরিয়ায় অন্তত ১,৪৪৪ জন নিহত হয়েছে। সারাদেশে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৩ হাজার ৪১১ জনকে।
ভূমিকম্পের কারণে উভয় দেশেই অনেক ভবন ধসে পড়েছে। এতে বহু মানুষ আটকে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান চলছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) অনুসারে, সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্কের নুরদাগি এলাকার ২৩ কিলোমিটার পূর্বে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৮। রাজধানী আঙ্কারা এবং তুরস্কের অন্যান্য শহরেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়। গাজিয়ানটেপ শহরের কাছে এর গভীরতা ছিল মাত্র ১৭.৯ কিলোমিটার।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে যে প্রথম ভূমিকম্পের পরে আরও কয়েকটি আফটারশক অনুভূত হয়েছিল। শেষ কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৭।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এক টুইট বার্তায় বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা একসঙ্গে এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠব। ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ইউনিটগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সায়লু বলেছেন, ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হলো গাজিয়ানটেপ, কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালত্য, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস। অনেক ভবন ধসে পড়েছে এবং বহু মানুষ ভেতরে আটকা পড়েছে।
আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে তুরস্ক-সিরিয়ায়
সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো তুরস্ক-সিরিয়ায় আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২৪ মিনিটে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর উৎপত্তি দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশের এলবিস্তান জেলা থেকে।
এলবিস্তান জেলা গাজিয়ানটেপ শহর থেকে প্রায় ৮০ মাইল উত্তরে অবস্থিত। স্থানীয় সময় সোমবার সকালে গাজিয়ানটেপ শহরের কাছে ঘটে যাওয়া ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৩,৭০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে।
তুরস্কে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল বন্ধ
ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তুরস্কের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে।
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার অনেক অংশে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর শুধুমাত্র তুরস্কে মৃতের সংখ্যা ২,৩০০ ছাড়িয়েছে।
সিরিয়ায় ১,৪৪৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর, তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মোট মৃতের সংখ্যা এখন ৩,৭০০ ছাড়িয়েছে।
উভয় দেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জুড়ে ব্যাপক উদ্ধার অভিযান চলছে। যাইহোক, উদ্ধারকর্মীরা গ্রাম ও শহরে ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে অনুসন্ধান করার সাথে সাথে এই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
তুরস্কের ভূমিকম্পে গ্রিনল্যান্ডও কেঁপে ওঠে
সোমবার একটি শক্তিশালী ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানে, ডেনমার্কের গ্রিনল্যান্ড দ্বীপেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ডের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দ্বারা এটি নিশ্চিত করা হয়েছে।
তুরস্কে আঘাত হানা ভূমিকম্পের সিরিজের সময় ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ডেও ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছিল, ভূমিকম্পবিদ টিন লারসেন বলেছেন।
ভূমিকম্পে তুরস্কে ১৭১৮টি ভবন ধসে পড়েছে
তুরস্কের রাষ্ট্রপতির কার্যালয় জানিয়েছে যে দেশটিতে ১,৭১৮টি ভবন ধসে পড়েছে। সোমবার তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওতাককে উদ্ধৃত করে বলেছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও শত শত মানুষ আটকে আছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, গাজিয়ানটেপ এবং কাহরামানমারাস প্রদেশে প্রায় ৯০০টি ভবন ধ্বংস হয়েছে। তিনি সারা দেশে ধসে পড়া ভবনের সংখ্যা ১,৭১৮ বলে নিশ্চিত করেছেন।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে সহানুভূতি ও সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
পুতিন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে বলেছেন, “আমরা আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত।”
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের কাছে পাঠানো এক বার্তায় পুতিন নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও সমর্থন জানিয়েছেন।
এদিকে, ইসরাইল তুরস্ক ও সিরিয়ায় উদ্ধারকারী ও চিকিৎসা দল পাঠাবে বলে জানিয়েছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন যে অন্তত ৪৩টি দেশ এ পর্যন্ত সহযোগিতা প্রসারিত করার চেষ্টা করেছে।
জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও গ্রিস থেকে উদ্ধারকারী দল ইতিমধ্যেই তুরস্কে পৌঁছেছে।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কে সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এই সময়ে, জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে দূতাবাসগুলিতে পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।