বাংলাদেশে পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ, উদ্বিগ্ন ভারত

0

৫০ বছরেরও বেশি সময় পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি সমুদ্র যোগাযোগ শুরু হয়েছে। গত বুধবার করাচি থেকে একটি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এই ঘটনাকে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে নতুন দিক হিসেবে দেখা হলেও ভারত এতে উদ্বিগ্ন। তারা মনে করেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এমন ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি সমুদ্র বাণিজ্য শুরু হওয়ার বিষয়টি প্রতিবেশী ভারত ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। দেশটির সংবাদপত্র দ্য টেলিগ্রাফের আজকের খবরে বলা হয়েছে, পূর্ব ও পশ্চিম প্রতিবেশীদের মধ্যে এই নতুন সংযোগ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

তিন শতাধিক কনটেইনার বহনকারী কার্গো জাহাজটি চট্টগ্রামে নোঙর করার সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই নতুন রুট সাপ্লাই চেইনকে সহজ করবে, ট্রানজিট সময় কমিয়ে দেবে এবং উভয় দেশের জন্য নতুন ব্যবসার সুযোগ খুলে দেবে।’

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সাথে সরাসরি সমুদ্র বাণিজ্যকে স্বাগত জানায়। এতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে, দেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে।

পাকিস্তান থেকে পণ্যবাহী জাহাজটি বাংলাদেশে আনা পণ্যের বিস্তারিত না জানালেও ভারতীয় গণমাধ্যম একাধিক সূত্রে জানিয়েছে, বাকি চালানগুলো খালাসের আগে জাহাজ থেকে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি বড় কন্টেইনার নামানো হয়।

একজন বিশেষজ্ঞের মতে, ভারতীয় মিডিয়া বলেছে যে দুই দেশের মধ্যে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ভারতকে নতুন করে উদ্বিগ্ন করেছে। যদিও তিন মাস আগেও এই সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল।

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও মংলা বাংলাদেশের প্রধান দুটি বন্দর। গত পাঁচ দশকে এখানে জায়গা পায়নি পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হতো সিঙ্গাপুর ও কলম্বোর মাধ্যমে। চট্টগ্রাম ও মংলা বাংলাদেশের দুটি প্রধান বন্দর এবং উভয় বন্দরই পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগের বাইরে ছিল। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হতো সিঙ্গাপুর বা কলম্বোতে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে।

এর ফলে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ পণ্য আসার আশঙ্কা প্রকাশ করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এখন পাকিস্তানি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রামে আসায় বাংলাদেশে নিষিদ্ধ পণ্য পাঠানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

২০০৪ সালে চট্টগ্রামে অস্ত্র উদ্ধারের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘এখনও দক্ষিণ এশিয়ায় এটিই সবচেয়ে বড় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার। সে সময় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ট্রলারে আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল উলফার কাছে দেড় হাজার চীনা অস্ত্র পাঠায়। কিন্তু উলফার হাতে যাওয়ার আগেই সেগুলো জব্দ করা হয়।

টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া জানায়, মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখন অশান্ত। মিয়ানমার থেকে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মাদক পাচারের আশঙ্কা করছে ভারত।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কোনো সরকারি সূত্র থেকে কোনো বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। যাইহোক, এটি দুটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বৃদ্ধির একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে ব্রিটিশ প্রেস ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানি কার্গো জাহাজের নোঙর করা ঐতিহাসিক পরিবর্তনের প্রতীক। এটি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহ্যগতভাবে জটিল কূটনৈতিক সম্পর্কের উষ্ণতার নতুন দিগন্তের সূচনা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *